শাসক হিসেবে সুলায়মান খান কররানীর রাজত্বকাল পর্যালোচনা কর

প্রশ্ন : আফগানদের শ্রেষ্ঠ শাসক হিসেবে সুলায়মান খান কররানীর রাজত্বকাল পর্যালোচনা কর। [ফা. স্নাতক প. ২০১৫, '১৮] , সুলায়মান খান কররানীর রাজত্বকাল
Follow Our Official Facebook Page For New Updates


Join our Telegram Channel!

প্রশ্ন : আফগানদের শ্রেষ্ঠ শাসক হিসেবে সুলায়মান খান কররানীর রাজত্বকাল পর্যালোচনা কর। [ফা. স্নাতক প. ২০১৫, '১৮] 

সুলায়মান খান কররানীর রাজত্বকাল

উপস্থাপনা : 

বাংলায় কররানী বংশের ইতিহাসে সুলায়মান খান কররানীর রাজত্বকাল ছিল বিশেষভাবে স্মরণীয়। স্বাধীন সুলতানি আমলে তার একটি উল্লেখযোগ্য সময় পর্যন্ত বাংলার শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করেন। 

তিনি ছিলেন আফগান ও পাঠান জাতির শ্রেষ্ঠ শাসক। তাঁর আদি নিবাস ছিল কুররামে। তাঁরা প্রায় ১২ বছর এদেশে রাজত্ব করেন। তাই কররানী বংশ বাংলার মুসলিম শাসনকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছে।

সুলায়মান খান কররানীর রাজত্বকাল: 

সুলায়মান খান কররানী অত্যন্ত বিজ্ঞ ও বিচক্ষণ শাসক ছিলেন। তাঁর অতুলনীয় শক্তি, সাহস ও মেধাবলে তিনি সমসাময়িক সম্রাটদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে শাসন পরিচালনা করেন। 

নিম্নে বাংলার ইতিহাসে সুলায়মান কররানীর রাজত্বকাল সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

১. সুলায়মান খান কররানীর মসনদ লাভ : 

তাজ খান কররানীর ইস্তেকালের পর ১৫৬৫ খ্রিস্টাব্দে সুলায়মান খান কররানী বাংলার মসনদে আরোহণ করেন। তিনি ১৫৬৫ থেকে ১৫৭২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দীর্ঘ আট বছর দক্ষতার সাথে বাংলার সালতানাত পরিচালনা করেন। 

তিনি বাংলাকে উত্তর ও পূর্ব ভারতের শ্রেষ্ঠ শক্তিতে পরিণত করেন। এভাবে তিনি নিজেও অসাধারণ ক্ষমতার অধিকারী হন।

২. উড়িষ্যা বিজয় : 

উড়িষ্যার অভ্যন্তরীণ গোলযোগের সময় বাংলার বিদ্রোহী শাসক ইবরাহীম খান শূরকে আশ্রয় দেয়ায়, আকবরের পরামর্শে বিদ্রোহী জৌনপুরের খানই জামানের বন্ধু সোলায়মানের বিরোধিতা করায় এবং এক সময়,

সাতগাঁয়ে মুকন্দবেদ ঘাঁটি নির্মাণ করলে সুলায়মান কররানী ক্ষুব্ধ হন। এরপর তিনি উড়িষ্যা জয় করার দৃঢ়সংকল্প ব্যক্ত করেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি বায়েজীদ ও দুর্ধর্ষ সেনাপতি কালাপাহাড়ের অধীনে অভিযান প্রেরণ করেন। 

কুটসামার নিকট ১৫৬৮ খ্রিস্টাব্দে উড়িষ্যার যুদ্ধে রাজা হরিচন্দ্র মুকুন্দ রাম ও তাঁর সেনাপতি রামচন্দ্র ভানজা পরাজিত ও নিহত হন। ফলে সুলায়মান উড়িষ্যায় বিজয় লাভ করেন ।

৩. কুচবিহার জয় : 

কুচবিহারের রাজা বিশ্বসিংহ তাঁর পুত্র ও সেনাপতি চিলা রায়ের অধীনে একদল সৈন্য কররানী রাজ্য আক্রমণে প্রেরণ করেন। সুলায়মান খান কররানী চিলা রায়কে পরাজিত ও বন্দি করেন। 

এ সময় সুলায়মান সেনাপতি কালাপাহাড়কে কুচবিহার জয়ের জন্য প্রেরণ করেন। কালাপাহাড় কুচপাহাড় কুচবিহারের কামাখ্যা ও হাজু পর্যন্ত অঞ্চল অধিকার করেন। পরে অবশ্য কুচবিহারের বিজিত অঞ্চল প্রত্যর্পণ করে সুলায়মান খান, 

কররানী বিশ্বসিংহের সাথে মিত্রতা স্থাপন করেন। তিনি তাজনগর হয়ে পুরীও দখল করেন এবং জগন্নাথ মন্দির থেকে প্রচুর ধনরত্ন অধিকার করেন। এরপর তিনি দূরদর্শী মন্ত্রী লোদী খান ও কতলু খানকে উড়িষ্যা ও পুরীর শাসক নিযুক্ত করেন।

৪. দূরদর্শী শাসক : 

সুলায়মান খান কররানী ছিলেন দূরদর্শী শাসক। তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন, নিজ রাজ্যের নিরাপত্তা ও শান্তি বজায় রাখতে হলে মুঘলদের সাথে কূটনৈতিক সম্প্রীতি বজায় রাখা প্রয়োজন। 

এ জন্য তিনি আকবরের সাম্রাজ্যের পশ্চিমাংশের শাসনকর্তা খান-ই জামান, আলী কুলী খান ও মুনিম খানকে উপহার উপঢৌকন দিয়ে সন্তুষ্ট রাখতেন। তিনি আকবরের দরবারেও মূল্যবান উপঢৌকন প্রেরণ করতেন ।

৫. দিল্লি সালতানাতের মোসাহেবি : 

সুলায়মান খান কররানী দিল্লি সালতানাতের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য প্রকাশ করতেন। তিনি যদিও বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার সর্বোচ্চ শাসক ছিলেন, তবুও কৌশলগত কারণে তিনি প্রকাশ্যে সার্বভৌম ক্ষমতার দাবি করেননি। তিনি দিল্লির সম্রাটের নামে খোতবা পাঠ ও মুদ্রা মুদ্রণ করতেন। 

অন্যান্য সম্রাটের ন্যায় তিনি 'শাহ' কিংবা 'সুলতান' উপাধি ধারণ করেননি; কেবল ‘হযরত আলী' উপাধি ধারণ করেই সন্তুষ্ট ছিলেন। মোদ্দাকথা, সুলায়মান খান কররানী ছিলেন দিল্লি সালতানাতের মোসাহেব বা বাস চামচা।

৬. শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা : 

সুলায়মান খান কররানী বাংলার অধিপতি হয়ে রাজ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখেন। ফলে তাঁর শাসনামলে রাজস্বের পরিমাণ বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। ন্যায়বিচারক হিসেবেও তিনি খ্যাতি অর্জন করেন। 

এছাড়া তিনি সাম্রাজ্যের সর্বত্র নতুন আইন জারি করে দেশকে উন্নতির শীর্ষমার্গে পৌঁছে দেন।

৭. দূরদর্শী : 

সুলায়মান কররানী ছিলেন একজন দূরদর্শী কূটনীতিক। তিনি রাজ্যের নিরাপত্তার স্বার্থে দিল্লির সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। তিনি মুঘল সাম্রাজ্যের পশ্চিমাংশের শাসক আলী কুলী খানের সাথেও সম্পর্ক উন্নত করেন। 

পরে আলী কুলী খান বিদ্রোহ করলেও পরাজিত হন এবং জৌনপুরের শাসক মুনিম খানকে সন্তুষ্ট রেখে সুলায়মান কররানী মুঘলদের সাথে সংঘর্ষ এড়িয়ে চলতেন ।

৮. জনকল্যাণমূলক কার্যাবলি : 

সুলায়মান কররানী ছিলেন একজন জনকল্যাণকামী শাসক। তিনি জনগণের কল্যাণার্থে অসংখ্য জনহিতকর কার্যাবলি সম্পাদন করেন। যেমন- স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করেন। 

এছাড়া সাম্রাজ্যের সর্বত্র তিনি অসংখ্য রাস্তাঘাট, পুল, কালভার্ট ও সেতু নির্মাণ করেন। ফলে জনগণ সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাকে।

৯. সার্বিক সাফল্য : 

বাংলার মুসলিম শাসনব্যবস্থার ইতিহাসে সুলায়মান কররানী ছিলেন একজন মহান শাসক। শাসক হিসেবে সিংহাসনে আরোহণের পর -থেকে 

সুলায়মান কররানী স্বীয় বুদ্ধিমত্তা, যোগ্যতা ও দক্ষতায় সকল সমস্যার সঠিক মোকাবেলা করে সফলতার শীর্ষে আরোহণ করেন।

উপসংহার : 

উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, বাংলায় কররানী রাজত্ব প্রতিষ্ঠায় সুলায়মান খান কররানী প্রসিদ্ধ নাম। তাঁর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও বিচক্ষণতার কারণে বাংলার স্বাধীন সালতানাতের ইতিহাসে,

বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে আছেন। তাঁর শাসনামলে বাংলায় সুশাসন বজায় ছিল। এছাড়া রাজ্য সম্প্রসারণেও তাঁর কৃতিত্ব ছিল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।


নিত্য নতুন সকল আপডেটের জন্য জয়েন করুন

Telegram Group Join Now
Our Facebook Page Join Now
Class 8 Facebook Study Group Join Now
Class 7 Facebook Study Group Join Now
Class 6 Facebook Study Group Join Now

Post a Comment