দুই বিঘা জমি পদ্যাংশ সকল সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর - অষ্টম শ্রেনি (PDF)

দুই বিঘা জমি পদ্যাংশ সকল সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর দুই বিঘা জমি কবিতা পিডিএফ, দুই বিঘা জমি কবিতার প্রেক্ষাপট, দুই বিঘা জমি কবিতা আবৃত্তি, দুই বিঘা জমি
Follow Our Official Facebook Page For New Updates


Join our Telegram Channel!

দুই বিঘা জমি পদ্যাংশ সকল সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর - অষ্টম শ্রেনি (PDF) | Class 8 Dui Bigha Jomi All Creative Questions and Answers

নিচে দুই বিঘা জমি গল্পের সকল সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরপত্র পিডিএপ আকারে দেয়া রয়েছে।

দুই বিঘা জমি পদ্যাংশ সকল সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর - অষ্টম শ্রেনি (PDF)

দুই বিঘা জমি সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর:

সৃজনজীল প্রশ্ন -১: নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :

গাজীপুর চৌরাস্তার কাছে মতিন মিয়ার ছোট্ট এক চায়ের দোকান। আর দোকানের পাশেই গড়ে উঠেছে ‘ক’ হাউজিং সোসাইটির বিশালাকার অ্যাপার্টমেন্ট। একদিন সকালে মতিন দেখে, তার দোকান অ্যাপার্টমেন্টের সীমানা প্রাচীরের মধ্যে আটকে গেছে। সে বুঝে গেল আর কিছুই করার নেই। উপায়ন্তর না দেখে সে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ফ্লাক্সে করে চা বিক্রি করে সংসার চালায় আর উদাস দৃষ্টিতে গগনচুম্বি অট্টালিকাগুলোর দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।


ক. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কত খ্রিষ্টাব্দে নোবেল পুরস্কার পান? ১

খ. ‘রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি’- বলতে কী বোঝানো হয়েছে? ২

গ. ‘ক’ হাউজিং সোসাইটির কার্যক্রমে ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার বাবু সাহেব চরিত্রের যে দিকটি ফুটে উঠেছে তার বর্ণনা দাও। ৩

ঘ.উদ্দীপকের মতিন ‘দুই বিঘা জমির’ শোষিত উপেনের সার্থক প্রতিনিধি কিনা- এ বিষয়ে তোমার মতামত যুক্তি সহকারে উপস্থাপন কর। ৪

 

১নং প্রশ্নের উত্তর 


ক. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে নোবেল পুরস্কার পান।


খ. আলোচ্য অংশে বিত্তবান লোকদের প্রাচুর্যের মধ্যে থেকে আরও সুখভোগের আশায় দরিদ্রের শেষ সম্পদটুকুও গ্রাস করতে চাওয়ার কথা বলা হয়েছে।

 সমাজে একশ্রেণির লুটেরা বিত্তবান লোক প্রবল প্রতাপ নিয়ে বাস করে। এ শ্রেণির লোকেরা সাধারণ মানুষের সম্পদ লুট করে সম্পদশালী হয়। অর্থ, শক্তি ও দাপটের জোরে তারা অন্যায়কে ন্যায়, ন্যায়কে অন্যায় বলে প্রতিষ্ঠা করে। ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার উপেন তার সাত পুরুষের স্মৃতিবিজড়িত জমির দখল দিতে না চাইলে জমিদার তার নামে মিথ্যে মামলা দিয়ে সে জমি দখল করে নেয়। প্রশ্নে উল্লিখিত চরণে সমাজের এই দিকটিই তুলে ধরা হয়েছে।


গ. ‘ক’ হাউজিং সোসাইটির কার্যক্রমে ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার বাবু সাহেব চরিত্রে শোষকশ্রেণির মানসিকতার দিকটি ফুটে উঠেছে।

 ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায় দরিদ্র কৃষক উপেন অভাব-অনটনে বন্ধক দিয়ে তার প্রায় সব জমি হারায়। বাকি থাকে মাত্র দুই বিঘা জমি। কিন্তু জমিদার তার বাগান বাড়ানোর জন্য মিথ্যা মামলা দিয়ে সে জমি দখল করে নেয়। এতে জমিদারের অন্যায় সম্পদ আকাক্সক্ষা বা লোভের দিকটি উঠে এসেছে। উদ্দীপকের ‘ক’ হাউজিং সোসাইটির কার্যক্রমে। জমিদারের চরিত্রের এ বৈশিষ্ট্যই ফুটে উঠেছে

 উদ্দীপকের মতিন মিয়ার চায়ের দোকানের পাশে গড়ে উঠেছে ‘ক’ হাউজিং সোসাইটির বিশাল অ্যাপার্টমেন্ট। ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার জমিদারের মতো এই ‘ক’ হাউজিং সোসাইটির লোলুপ মানসিকতার কারণে মতিন মিয়া তার চায়ের দোকানটি হারায়। দোকানটি হারিয়ে মতিন মিয়ার দুর্দশার অন্ত থাকে না। কিন্তু ‘ক’ হাউজিং সোসাইটি দোকানটি আত্তীকরণ করার সময় তার এ পরিণতির কথা ভাবেনি। সম্পদের প্রচÐ লোভের কাছে তাদের সে চেতনাবোধ পরাজিত হয়েছে। সুতরাং নির্দ্বিধায় বলা যায়, ‘ক’ হাউজিং সোসাইটির কার্যক্রমে ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার বাবু সাহেবের চরিত্রের অযাচিত সম্পদ আকাক্সক্ষা বা লোভের দিকটি ফুটে উঠেছে।


ঘ. উদ্দীপকের মতিন দুই বিঘা জমির শোষিত উপেনের সার্থক প্রতিনিধি নয়।

 কবিতার উপেন এবং উদ্দীপকের মতিন মিয়ার মাঝে পরিণতির দিক থেকে সাদৃশ্য থাকলেও উদ্দীপকের মতিন মিয়ার ক্ষেত্রে উপেনের প্রতিবাদী, ভালোবাসাপূর্ণ ও মমত্ববোধসম্পন্ন মানসিকতা অনুপস্থিত।

 ‘দুই বিঘা জমি’ একটি কাহিনী-কবিতা। এই কবিতায় দেখা যায় যে, দরিদ্র কৃষক উপেন অভাব-অনটনে বন্ধক দিয়ে বাকি ছিল মাত্র দুই বিঘা জমি। কিন্তু জমিদার তার বাগান দৈর্ঘ্যে প্রস্থে বৃদ্ধি করার জন্য মিথ্যা মামলা দিয়ে সে জমি দখল করে নেয়। ভিটেমাটি ছাড়া হয়ে উপেন বাধ্য হয় পথে বেরুতে। জমিদারের অর্থ ও প্রতিপত্তির কাছে উপেন হার মানলেও লড়াই করে হার মেনেছে। এতে তার প্রতিবাদী মানসিকতার প্রকাশ পাওয়া যায়। এ ছাড়া কবিতাটিতে নিজ গ্রাম, নিজ জন্মভূমির প্রতি উপেনের গভীর ভালোবাসা ও মমত্ববোধেরও প্রকাশ লক্ষণীয়। মতিনের চায়ের দোকানের পাশে গড়ে উঠেছে ‘ক’ হাউজিং সোসাইটির বিশালাকার অ্যাপার্টমেন্ট। কিন্তু অ্যাপার্টমেন্টের সীমানা প্রাচীর বাড়াতে তারা মতিনের দোকানটি আত্তীকরণ করে। উপায়ান্তর না দেখে সে নিয়তিকে মেনে নেয় এবং রাস্তায় ঘুরে ঘুরে ফ্লাক্সে করে চা বিক্রি করে।

 সামগ্রিক আলোচনায় দেখা যাচ্ছে যে, ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায় জমিদারের অন্যায় সম্পদ আকাক্সক্ষার কারণে যেমন কৃষক উপেন সর্বস্বান্ত হয়ে পথে নামতে বাধ্য হয়েছে, তেমনি ‘ক’ হাউজিং অ্যাপার্টমেন্টের লালসার কারণে পথে নামতে বাধ্য হয়েছে চায়ের দোকানদার মতিন। এদিক দিয়ে তারা অভিন্ন হলেও অধিকার সচেতন এবং মমত্ববোধসম্পন্ন মানসিকতার দিক বিচারে উদ্দীপকের মতিন দুই বিঘা জমির শোষিত উপেনের সার্থক প্রতিনিধি নয়।দুই বিঘা জমি সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

 

সৃজনজীল প্রশ্ন -২: নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :

 নিয়ত মানসধামে একরূপ ভাব

 জগতের সুখ-দুখে সুখ দুখ লাভ \

 পরপীড়া পরিহার, পূর্ণ পরিতোষ

 সদানন্দে পরিপূর্ণ স্বভাবের কোষ \

 নাহি চায় আপনার পরিবার সুখ

 রাজ্যের কুশল কার্যে সদা হাস্যমুখ \

 কেবল পরের হিতে প্রেম লাভ যার

 মানুষ তারেই বলি মানুষ কে আর? 


ক. ‘দুই বিঘা জমি’ কী ধরনের কবিতা? ১

খ. ‘স্নেহের সে দানে বহু সম্মানে বারেক ঠেকানু মাথা’। -ব্যাখ্যা কর। ২

গ. উদ্দীপকের মানুষের গুণাবলির সাথে ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার মহারাজের চরিত্রের বৈসাদৃশ্য দেখাও। ৩

ঘ.‘দুই বিঘা জমি’র মহারাজ উদ্দীপকের গুণে গুণান্বিত হলে উপেনের এই পরিণতি হতো না। -উক্তিটি মূল্যায়ন কর। ৪ দুই বিঘা জমি সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

 

২নং প্রশ্নের উত্তর 


ক. ‘দুই বিঘা জমি’ একটি কাহিনী-কবিতা।


খ. ‘স্নেহের সে দানে বহু সম্মানে বারেক ঠেকানু মাথা’- চরণটি দ্বারা জননীর স্নেহের দানে উপেনের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ পেয়েছে। 

 অনেক বছর পর উপেন যখন হারানো ভিটেতে এলো, তখন সেই পরিচিত ভূমি যেন চিনতে পারল না, শুধু এক আমগাছ ছাড়া। পুরনো আমগাছ দেখে উপেন তার নিচে বসতেই গাছ থেকে দুটো পাকা আম পড়ল। উপেন ভাবল, আমগাছটি তাকে চিনতে পেরেই আম দুটি দিয়েছে। তাই কৃতজ্ঞতা জানাতে আমগাছের গোড়ায় সে মাথা ঠেকালো।


গ. উদ্দীপকের মানুষের গুণাবলির সাথে ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার মহারাজ্যের চরিত্রের বৈসাদৃশ্য অত্যন্ত স্পষ্ট।

 মানুষ মানবিক গুণে সমৃদ্ধ। গুণ না থাকলে সে আর মানুষ থাকে না। তার দ্বারা মানবতা উপকৃত তো হয়ই না, বরং পদে পদে এসে মানুষের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মানুষকে নিঃস্ব করে সে পথে নামায়।

 উদ্দীপকে মানুষের গুণাবলির যে পরিচয় পাই তা হলো কেবল নিজের সুখ কাম্য নয়। সব কাজ হাসিমুখে করতে হবে। পরের কল্যাণে নিবেদিত থাকতে হবে। কিন্তু ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার মহারাজের চরিত্র যেন সম্পূর্ণ উল্টো। অন্যের কল্যাণ করাতো দূরের কথা পথে বসাতে তার ফন্দির অন্ত নেই। যে ফন্দির বেড়াজালে করুণ পরিণতির নির্মম শিকার হয় উপেন। তাই বলা যায়, মানুষের গুণাবলির সম্পূর্ণ বৈসাদৃশ্যপূর্ণ চরিত্র ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার মহারাজের।


ঘ. ‘দুই বিঘা জমি’র মহারাজ উদ্দীপকের গুণে গুণান্বিত হলে উপেনের এই পরিণতি হতো না- উক্তিটি যথার্থ।

 মানুষ মানুষের জন্য। এটিই মানুষের বড় বৈশিষ্ট্য। এ বৈশিষ্ট্যের গুণে মানুষের কল্যাণে মানুষ এগিয়ে আসবে। অন্যের বিপদ আপদে নিবেদিত হবে। সর্বোপরি বিপন্ন মানুষকে উদ্ধারে সচেষ্ট হবে।

 উদ্দীপকে মানবীয় গুণসম্পন্ন যথার্থ মানুষের পরিচয় মেলে। এ মানুষ নিজের সুখ চায় না। কেবল পরের কল্যাণে নিবেদিত। পরের সুখশান্তির কাছে নিজের সুখ জলাঞ্জলি দেয়। কিন্তু কবিতায় ঠিক উল্টো চিত্র দেখা যায়। শোষকশ্রেণির প্রতিনিধি পরধন লোভী জমিদারের লোলুপ দৃষ্টির নিষ্ঠুর শিকার হয় দুই বিঘা জমির মালিক উপেন। ভিটেমাটিসহ এ দুই বিঘা জমি দিতে না চাইলে নির্মম ক্রোধের মুখে পড়ে সে। মিথ্যা মামলা দিয়ে সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে উপেনকে নিঃস্ব করে ছাড়ে লুটেরা বিত্তবান প্রবল প্রতাপশালী মহারাজ। অথচ এ তথাকথিত মহারাজ যদি উদ্দীপকের প্রকৃত মানুষের গুণে গুণান্বিত হতো অবধারিতভাবে উল্টো ফল হতো। আর যাই হোক উপেনের করুণ পরিণতি হতো না। 

 উল্লিখিত আলোচনায় বলা যায়, অন্যের সম্পদ লুটকারী মহারাজের লালসার শিকার হয়েই উপেনের করুণ পরিণতি। অথচ তথাকথিত মহারাজ উদ্দীপকের গুণে গুণান্বিত হলে ফলাফল ভিন্ন হতো। অতএব প্রশ্নোক্ত উক্তিটি যথার্থ। দুই বিঘা জমি সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর


সৃজনজীল প্রশ্ন -৩: নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :

হাসমত সাহেব একটা বড় সার কারখানা তৈরি করতে চায়। তার জমির পার্শ্বেই ছিল চায়ের দোকানদার জনির এক শতক জমি। হাসমত সাহেব তা জোর করে দখল করে নেয়। কোনো বিচার না পেয়ে অগত্যা জনি পথে পথে চা বিক্রি করে, আর দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে সার কারখানার দিকে তাকিয়ে বলে ঐখানে আমার জমি ছিল অথচ এখন আমি নিঃস্ব।


ক. কার মাথায় ঝুঁটি-বাঁধা আছে? ১

খ. উপেন কেন তার জমিকে নিলাজকুলটা বলেছিল? ২

গ. উদ্দীপকের ‘জনি’ চরিত্রটি ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার কোন চরিত্রের প্রতিনিধিত্ব করে বর্ণনা কর। ৩

ঘ.“উদ্দীপকের হাসমত আর ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার জমিদার বর্বরতার দিক থেকে সমগোত্রীয়”-মূল্যায়ন কর। ৪ দুই বিঘা জমি সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

 

৩নং প্রশ্নের উত্তর 


ক. মালির মাথায় ঝুঁটি বাঁধা আছে।


খ. নিজের গ্রামে এসে বাস্তুভিটার পরিবর্তিত রূপ দেখে উপেন নিজ জমিকে ‘নিলাজ কুলটা’ বলেছে।

 পৈতৃক ভিটার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে প্রায় দুদিন পর কুমোরের বাড়ি, রথতলা, হাটখোলা, মন্দির পেছনে ফেলে সে তার কাক্সিক্ষত জন্মভূমিতে এসে পৌঁছায়। কিন্তু জন্মভূমির সেই চিরচেনা রূপকে কালের বিবর্তনে পরবর্তিত হতে দেখে সে তাকে ‘নিলাজ কুলটা’ বলেছে।


গ. উদ্দীপকের জনি চরিত্রটি ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার উপেন চরিত্রের প্রতিনিধিত্ব করে।

 শক্তিমানরা দুর্বলের ওপর অত্যাচার করবে এটাই যেন সমাজের এক অলিখিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর দুর্বলরা শুধু তাকিয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। যেমনটি ছিল না নিঃস্ব উপেনের। উপেন ভূমিদস্যু জমিদারের রাহুগ্রাসে পড়ে তার সর্বস্ব হারিয়ে আজ পথের ভিখারি।

 উদ্দীপকের জনির অবস্থাও উপেনের অনুরূপ আধিপত্যবাদী হাসমত সাহেব জোর করে জনির এক শতক জমি দখল করে নেয়। বিচারের বাণী জনির জন্যই বোধ হয় নিভৃতে কাঁদে। নিজ ভূম থাকতেও জনি একজন রাস্তার চা বিক্রেতা। নিজের জমির দিকে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে তাকানো ছাড়া জনির আর কিছুই করার থাকে না। তাই সকল কার্যকরণ বিবেচনা করে জনি নিঃসন্দেহে উপেনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ বলা যায়।


ঘ. উদ্দীপকের হাসমত আর ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার জমিদার বর্বরতার দিক থেকে উভয়ে সমগোত্রীয়।

 ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায় দুর্বলের প্রতি সবলের অত্যাচার ও শোষণের দিকটি তীব্র ঘৃণার সাথে প্রকাশ পেয়েছে। শোষক তার হীননীতি বজায় রাখতে সর্বদা সচেষ্ট। তারা দুর্বলের ওপর নানা অত্যাচার চালায়। দস্যুতার ন্যায় লুণ্ঠন করে অসহায়ের সর্বস্ব। এ কাজ করতে তাদের সামান্যতম বিবেকে বাধে না।

 উদ্দীপকের জনির এক শতক জমি হাসমত সাহেব তার সার কারখানা তৈরি করার জন্য দখল করে নেয়। জনি কারো কাছে এ অন্যায়ের প্রতিকার চেয়ে পায় না। অগত্যা রাস্তায় চা বিক্রি করা ছাড়া আর কোনো পথ তার খোলা থাকে না। ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার উপেনও জমিদারের রোষানলের স্বীকার হয়। জমিদার বাগান করার জন্য উপেনের শেষ অবলম্বনটুকুও কেড়ে নেয়।

 উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে একটি বিষয় প্রতীয়মান হয় আর তা হলো উদ্দীপক হাসমত সার কারখানা তৈরির জন্য দরিদ্র জনির জমিটুকু দখল করতে বিন্দুমাত্র বিবেকবোধ দ্বারা তাড়িত হয়নি। অপরদিকে ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায় জমিদারও উপেনের জমি মিথ্যে মামলা দিয়ে দখল করতে দ্বিধা করেনি। তাই জমিদার ও হাসমত সাহেবকে বর্বরতার দিক থেকে সমগোত্রীয় বলা যায়।


সৃজনজীল প্রশ্ন -৪: নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :

ঘূর্ণিঝড়ে জনৈক মাঝির চাষের জমিসহ সব সহায় সম্পত্তি হারিয়ে শুধু ভিটেমাটিটাকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছে, কিন্তু একদিন তার এক নিকট আত্মীয়ের বিয়েতে ভিটের বাহিরে তিন দিন কাটিয়েছিল। ফিরে এসে দেখে পাশের বাড়ির রতন তার ভিটেতে দালানকোঠা উঠিয়েছে। ভিটে ফিরে পাওয়ার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরলেও সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলো। অবশেষে সে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে লাগল।


ক. উপেন কীসের কথা ভুলতে পারে না? ১

খ. রাজা উপেনের দুই বিঘা জমি কিনে নিতে চেয়েছিল কেন? ২

গ. উদ্দীপকে রতন বাবুর ভিটে দখলের সঙ্গে দুই বিঘা জমি কবিতার কোন ঘটনার সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা কর। ৩

ঘ.কিছু বৈসাদৃশ্য থাকলেও উদ্দীপকে ‘রতন ও দুই বিঘা জমি’ কবিতার ‘জমিদার’ উভয়ই একই দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী- বিশ্লেষণ কর। ৪ দুই বিঘা জমি সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

 

৪নং প্রশ্নের উত্তর 


ক. উপেন পৈতৃক ভিটের স্মৃতি ভুলতে পারে না।


খ. রাজা বাগান দৈর্ঘ্যে প্রস্থে বাড়ানোর জন্য উপেনের দুই বিঘা জমি কিনে নিতে চেয়েছিল।

 বিত্তবান জমিদারের সম্পদের কোনো অভাব নেই। তবুও জমিদারের আরও চাই। জমিদারের জমির পাশেই ছিল ভিটেমাটি সর্বস্ব উপেনের জমি। রাজার খেয়াল হলো রাজা বাগান করবেন। কিন্তু বাগান বৃদ্ধি করতে হলে উপেনের জমিটি দরকার।


গ. উদ্দীপকে রতন বাবুর ভিটে দখলের সঙ্গে দুই বিঘা জমি কবিতার রাজা উপেনের দুই বিঘা জমি দখলের সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়।

 ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায় দেখা যায়, জমিদার নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য মিথ্যে মামলা দিয়ে উপেনের জমি দখল করে নেয়। সমাজে একশ্রেণির লুটেরা বিত্তবান প্রবল প্রতাপ নিয়ে বাস করে। তারা অর্থ, শক্তি, দাপটের জোরে অন্যায়কে ন্যায় ও ন্যায়কে অন্যায় বলে প্রতিষ্ঠা করে। ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতাটিতে ভূস্বামী এদেরই প্রতিনিধি। উদ্দীপকের ঘটনাতেই এই সাদশ্য লক্ষণীয়।

 জনৈক মাঝি ঘূর্ণিঝড়ে সব সহায় সম্পত্তি হারিয়ে শুধু ভিটেমাটিটাকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছে, কিন্তু একদিন সুযোগ পেয়ে তা দখল করে নেয় পাশের বাড়ির রতন বাবু। মাঝির ভিটেতে দালানকোঠা উঠিয়েছে রতন বাবু। ভিটে ফিরে পাওয়ার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরলেও সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। উভয়েই দুজন প্রভাবশালী ব্যক্তির কবলে পড়ে সর্বস্ব হারিয়েছে। অর্থাৎ উদ্দীপকে রতন বাবুর ভিটে দখলের সঙ্গে ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার রাজা উপেনের দুই বিঘা জমিক দখলের দিক দিয়ে সাদৃশ্য রয়েছে।


ঘ. কিছু বৈসাদৃশ্য থাকলেও উদ্দীপকের ‘রতন ও দুই বিঘা জমি কবিতার ‘জমিদার’ উভয়ই একই দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী- এ উক্তি যথার্থ।

 রতন বাবু ও জমিদারের মাঝে জমি হাতিয়ে নেয়ার পদ্ধতির ক্ষেত্রে বৈসাদৃশ্য থাকলেও একটি ক্ষেত্রে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি এক আর তাহলো দাপটের জোরে অন্যের সম্পদ লুট করা। উদ্দীপকের মাঝি ঘূর্ণিঝড়ের কবলে সব সহায়-সম্পদ হারিয়ে অসহায়। রতন বাবু মাঝির অনুপস্থিতি সুযোগ নিয়ে তার শেষ সম্বল ভিটেমাটি দখল করে নেয়। পক্ষান্তরে ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায় জমিদার ও একইভাবে কেড়ে নেয়।

 রতন বাবু ও জমিদার সাধারণ মানুষের সম্পদ লুট করে সম্পদশালী হওয়ার আকাক্সক্ষা পোষণ করে। তারা অর্থ, শক্তি ও দাপটের জোরে অন্যায়কে ন্যায়, ন্যায়কে অন্যায় বলে প্রতিষ্ঠা করে।

 সুতরাং উল্লিখিত আলোচনার মাধ্যমে বলা যায় যে, প্রেক্ষাপট সামান্য ভিন্ন হলেও তারা দুজনে একই দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী।

দুই বিঘা জমি সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

সৃজনজীল প্রশ্ন -৫: নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :

সোনাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাহেব অত্যন্ত সৎ ও ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি। তিনি সবাইকে সমান চোখে দেখেন। এমনকি বাড়ির চাকর মকবুলকেও নিজের ছেলের মতো জামাকাপড় কিনে দেন, একসাথে বসে খাবার খান। এজন্য অনেকে ভুল করে মকবুলকে চেয়ারম্যানের নিকট আত্মীয় বলে মনে করেন।


ক. ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার উৎস কী? ১

খ. ‘চোখে আসে জল ভরে’- কেন? বুঝিয়ে লেখ। ২

গ. চেয়ারম্যানের সাথে ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার জমিদারের চারিত্রিক বৈসাদৃশ্য কী? ব্যাখ্যা কর। ৩

ঘ.‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার জমিদার যদি উদ্দীপকের চেয়ারম্যানের মতো হতেন তবে উপেনের পরিণতি এমন হতো না। - বিশ্লেষণ কর। ৪

 

৫নং প্রশ্নের উত্তর 


ক. ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার উৎস হলো বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কথা ও কাহিনী’ কাব্যগ্রন্থ।


খ. জল নিয়ে চলা বাংলারবধূদের মা বলে ডাকতে প্রাণ আনচান করে, আবেগে দু’চোখে জল ভরে আসে।

 সন্ন্যাসীর বেশে হাটে, মাঠে, ঘাটে ঘুরতে ঘুরতে উপেনের ১৫-১৬ বছর কেটে গেল। একদিন তার দেশে ফেরার প্রচÐ ইচ্ছা হলো। ঘন পাতাযুক্ত আমগাছ, দিঘির কালোজল, শীতল স্নেহ, ছায়া ঢাকা শান্তিময় ছোট ছোট গ্রামগুলোর কথা তার মনে পড়ল। সেখানে গাঁয়ের বধূরা নদী থেকে জলভরে কলসি কাঁখে ঘরে ফেরে। গভীর মমতায় তাদেরকে মা বলে ডাকতে মন আনচান করে। চোখ ভরে জল আসে।


গ. সততা, ন্যায়পরায়ণতা এবং সাম্যবাদী চেতনা ও মানবিকতাবোধের দিক দিয়ে উদ্দীপকের চেয়ারম্যানের সাথে ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার জমিদারের চারিত্রিক বৈসাদৃশ্য রয়েছে।

 এ জগতে সম্পদশালীরা প্রচুর সম্পদ আহরণের পরও অতৃপ্ত থাকে। তাই দীনহীন মানুষের সামান্য সম্পদটুকু কেড়ে নেয়ার জন্য তারা প্রসারিত করে তাদের ভয়ঙ্কর কালো থাবা। তবে এ সম্পদশালীদের মধ্যে ব্যতিক্রমী চরিত্রের দু-চারজন মহৎ প্রাণের সন্ধানও পাওয়া যায় তেমনি একজন সোনাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাহেব।

 উদ্দীপকে সোনাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাহেব অত্যন্ত সৎ ও ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি। তিনি সবাইকে সমান চোখে দেখেন। এমনকি বাড়ির চাকর মকবুলের গ্রামেও পরিবারের সদস্যের মতো ব্যবহার করেন। এজন্য অনেকে ভুল করে মকবুলকে চেয়ারম্যানের নিকট আত্মীয় বলে মনে করেন। অপরদিকে ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায় আমরা দেখি এক সর্বগ্রাসি লোভী, অত্যাচারী, বিবেকবর্জিত, ন্যায়নীতিহীন এক জমিদার বাবুকে। অর্থাৎ উদ্দীপকের চেয়ারম্যানের সাথে ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার জমিদারের ন্যায়-নীতিবোধ, সততা, মানবিকতা ও সাম্যবাদী চেতনায় বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান। 


ঘ. উদ্দীপকের চেয়ারম্যানের মানবিক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার জমিদারের মধ্যে ক্রিয়াশীল থাকলে উপেনকে এমন করুণ পরিণতির শিকার হতে হতো না। 

 ধনসম্পদ বৃদ্ধির অদ্ভুত রকমের তৃষ্ণা সম্পদশালী মানুষকে ক্রমাগত তাড়িত করে। তাদের অপরিসীম ধনসম্পদ তৃষ্ণা এক সময় গ্রাস করে গরিবের শেষ সম্বল ভিটেবাড়ি। ছলে-বলে কৌশলে গরিবও অসহায় মানুষের শেষ সম্বলটুকু ছিনিয়ে নেয় এরা। এভাবেই দরিদ্র মানুষেরা পরিণত হয় পথের ভিক্ষুকে।

 উদ্দীপকের চেয়ারম্যান সাহেবকে আমরা সাম্যবাদী চেতনা ও মানবিকতাবোধেই একজন আদর্শ মানুষের প্রতিভুরূপে লক্ষ করি যিনি বাড়ির চাকরকে নিজের ছেলের মতো জামাকাপড় কিনে দেন, একসাথে খাবার খান। পক্ষান্তরে ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার জমিদার বাবু একজন লোভী, শোষক ও অত্যাচারী। তার শখ, লোভ ও হিংস্রতার শিকার হয়ে প্রতিবেশী দরিদ্র উপেন সাতপুরুষের ভিটা থেকে উচ্ছেদ হয়ে বিবাগী বেশে দেশে দেশে ঘুরে ফিরেছে। এমনি স্বদেশভূমির মায়ায় দেশে ফিরে নিজের গাছ থেকে বাতাসে পড়া দুটি নিয়েও জমিদার কর্তৃক চোর সাব্যস্ত হয়েছে।

 উদ্দীপকের চেয়ারম্যান সাহেবের সাম্যবাদী মানবতাবাদী চেতনার কারণে কবিতার জমিদার বাবুর সাথে বৈসাদৃশ্য প্রকট হয়ে উঠেছে। এমন নৈতিক-চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার জমিদার বাবু চরিত্রে থাকলে উপেনকে কিছুতেই উপরিউক্ত পরিণতির শিকার হতে হতো না। 

দুই বিঘা জমি সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

সৃজনজীল প্রশ্ন -৬: নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :

গরিব চাষি আফজালের সামান্য জমিজমা আছে। এতেই তার সংসার ভালোমতো চলে। একমাত্র ছেলে করিমকে লেখাপড়া শেখানোর জন্য স্কুলে পাঠায়। কিন্তু বিত্তবান হাতেম আলী বিষয়টা ভালোভাবে নেয় না। ষড়যন্ত্র করে আফজালকে ভিটেমাটি ছাড়া করে। অসহায় আফজাল নিরুপায় হয়ে দূর গ্রামে চলে যায়। কিন্তু ভুলতে পারে না গ্রামকে তাই আবার ফিরে আসে। প্রভাবশালী হাতেম আলী আবারও লোকজন দিয়ে তাকে গ্রাম ছাড়া করে।


ক. দরিদ্র মাতা আঁচল ভরে কী ধরে রাখত? ১

খ. উপেন কেন তার জমি বিক্রি করতে চায়নি? ২

গ. উদ্দীপকের আফজালের সাথে ‘দুই বিঘা জমি’ উপেনের কোনো সাদৃশ্য আছে কী? ব্যাখ্যা কর। ৩

ঘ.‘সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা প্রায়ই ক‚টকৌশলী হয়’- উদ্দীপক ও ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার আলোকে উক্তিটি বিশ্লেষণ কর। ৪

 

৬নং প্রশ্নের উত্তর 


ক. দরিদ্র মাতা আঁচল ভরে ফল ফুল শাক পাতা ধরে রাখত।


খ. সাতপুরুষের বাসস্থান উপেনের দৃষ্টিতে পুণ্যস্থান বলে উপেন তার জমি বিক্রি করতে চায়নি।

 জমিদার যখন বললেন, তার শখের বাগানকে দৈর্ঘ্য-প্রস্থে সমান করতে উপেনকে তার একমাত্র সম্বল ভিটাটুকু বিক্রি করতে হবে। উপেন তখন হাতজোড় করে কান্নাভেজা কণ্ঠে বলল, ঐ ভিটেয় তার সাতপুরুষ জন্ম। ঐটুকু জমি তার কাছে সোনার চেয়েও মূল্যবান। অভাবের কারণে মাতৃতুল্য সামান্য জমি সে বেচে দেবে এমন ল²ীছাড়া সে নয়।


গ. সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তির শোষণ-নিপীড়নের শিকার হওয়া এবং মাতৃভূমির মায়ার দিক দিয়ে ‘দুই বিঘা জমি’র উপেনের সাথে উদ্দীপকের আফজালের সাদৃশ্য রয়েছে।

 ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায় জমিদার বাবুর লোভের গ্রাসে একমাত্র সম্বল সাতপুরুষের ভিটেমাটি হারিয়ে উপেন পথে নামে। স্বভূমিচ্যুত হওয়ার প্রায় পনেরো-ষোলো বছর পর উপেন মাতৃভূতিতে ফিরে আনন্দে উদ্বেল হয়ে ওঠে। কিন্তু জমিদার বাবুর নিচতা, ক্রুরতা ও হিংস্রতার কারণে তাকে চোর সাব্যস্ত হতে হয়।

 উদ্দীপকে গরিব চাষি আফজাল তার একমাত্র ছেলে করিমকে লেখাপড়া শেখানোর জন্য স্কুলে পাঠায়। কিন্তু বিত্তবান হাতেম আলী ষড়যন্ত্র করে আফজালকে ভিটেমাটি ছাড়া করে। অসহায় আফজাল নিরুপায় হয়ে দূর গ্রামে চলে যায়। কিন্তু ভুলতে পারে না গ্রামকে, তাই আবার ফিরে আসে। প্রভাবশালী হাতেম আলী আবারও লোকজন দিয়ে তাকে গ্রাম ছাড়া করে।

 উদ্দীপকের আফজালের প্রভাবশালী কর্তৃক ষড়যন্ত্র ও নিপীড়নের শিকার হওয়া এবং নিজ ভিটেমাটি তথা মাতৃভূমি প্রেমের দিক দিয়ে ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার উপেনের সাথে সাদৃশ্য রয়েছে। তাই উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, উদ্দীপকের আফজালের সাথে ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার উপেনের পরিণতিগত সাদৃশ্য বিদ্যমান।


ঘ. “সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা প্রায়ই ক‚টকৌশলী হয়।”- উক্তিটি সঠিক।

 স্বীয় স্বার্থ আদায়ে সমাজের সম্পদশালী, প্রতিপত্তিশালী ব্যক্তিরা প্রায়ই ছল, শঠতা, ষড়যন্ত্রে দক্ষ হয়। এসব ব্যক্তি প্রয়োজনে স্বীয় স্বার্থ পূরণে যেকোনো পন্থা অবলম্বনে পিছপা হয় না। স্বীয় বাসনা পূরণ করার মানবতা ভুলে যেতে তারা দ্বিধা করে না।

 উদ্দীপকে গরিব চাষি আফজাল তার একমাত্র ছেলেকে লেখাপড়া শেখানোর জন্য স্কুলে পাঠায়। কিন্তু বিত্তবান হাতেম আলী ষড়যন্ত্র করে আফজালকে ভিটেমাটি ছাড়া করে। উদ্দীপকের অনুরূপ ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায় জমিদার বাবু তার শখের বাগানের সৌন্দর্যের প্রয়োজনে প্রতিবেশী গরিব চাষি উপেনের একমাত্র সম্বল সাতপুরুষের ভিটা মিথ্যা খতের দেনায় অন্যায়ভাবে কেড়ে নেয়। উদ্দীপকের হাতেম আলীর ক‚টকৌশলের চ‚ড়ান্ত প্রকাশ লক্ষ করা যায় যখন আফজাল মাটির টানে গ্রামে ফিরলে আবারও লোকজন দিয়ে তাকে গ্রাম ছাড়া করার মধ্যে।

 ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার জমিদার ভূমির টানে গ্রামে আসা উপেনের নিজের আমগাছের দুটি আম ভিক্ষা করাকে চুরি বলে আখ্যায়িত করে। অর্থাৎ সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তি অন্যায় করেও পার পেয়ে যায়। উপর্যুক্ত আলোচনায় এ কথা সহজেই বলা যায়, সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা প্রায়ই ক‚টকৌশলী হয়।

দুই বিঘা জমি সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

সৃজনজীল প্রশ্ন -৭: নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :

বহুদিন পরে মনে পড়ে আজি পল্লি মায়ের কোল

 ঝাউশাখে সেতা বনলতা বাঁধি হরষে খেয়েছি দোল।

 রর. পলাশ ঢাকা কোকিল ডাকা আমার এ দেশ ভাইরে

 ধানের মাঠে ঢেউ খেলানো মেন কোথাও নাইরে।

 

ক. উপেন কত বছর পরে দেশে ফেরার ইচ্ছা পোষণ করে? ১

খ. ‘তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ, আমি আজ চোর বটে।’ উপেনের একথা বলার কারণ ব্যাখ্যা কর। ২

গ. উদ্দীপকের ১ম অংশে ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার কোন দিকটি প্রকাশ পেয়েছে? বুঝিয়ে লেখ। ৩

ঘ.উদ্দীপকের অংশ দুটি কি ‘দুই বিঘা জমি’- কবিতার সমগ্রতাকে ধারণ করে? তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও। ৪

 

৭নং প্রশ্নের উত্তর 


ক. উপেন পনের-ষোলো বছর পরে দেশে ফেরার ইচ্ছা পোষণ করে।


খ. নিজ ভিটেতে ফিরে এসে কুড়িয়ে নেওয়া আমের কারণে চোর হিসেবে চিহ্নিত হলে উপেন উদ্ধৃত উক্তিটি করে।

 বাগান বাড়ানোর জন্য জমিদার মিথ্যা ঋণের দায়ে উপেনের কাছ থেকে জোর করে তার শেষ সম্বল দুই বিঘা জমি কেড়ে নেয়। দীর্ঘ দিন সন্ন্যাসী জীবন কাটানোর পর দেশে ফিরে সে শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত আমগাছের তলায় এসে আম পায়। কিন্তু সে কুড়িয়ে পাওয়া আমের ওপরও তার আর কোনো অধিকার নেই। তাই সে আজ জমিদারের চোখে চোর বলে বিবেচিত। উক্তিটিতে উপেনের মনে সে ক্ষোভই প্রকাশ পেয়েছে।


গ. উদ্দীপকের ১ম অংশে ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার সাত পুরুষের স্মৃতিবিজড়িত পৈতৃক ভিটের কথা মনে পড়ার দিকটি প্রকাশ পেয়েছে।

 জন্মভূমির সাথে থাকে নাড়ির বন্ধন। এ বন্ধন মায়ার বন্ধন। কোনোমতেই এ বন্ধন ছিন্ন হয় না। দূরে গেলে বরং সে মায়া আরও বেড়ে যায়। প্রতি মুহ‚র্তে, প্রতি পদে সে মায়ার টান বুকের মধ্যে গুমরে কাঁদে।

 উদ্দীপকের ১ম অংশে পল্লি মায়ের কথা মনে পড়ার উল্লেখ রয়েছে। এ পল্লি মায়া মমতায় ঘেরা। আপনজনদের স্নেহ-ছায়ায় উচ্ছল। প্রিয় সাথিদের সাথে হেসেখেলে বেড়ানোর। কতোশতো স্মৃতিঘেরা প্রিয় পল্লি। ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায় অনুরূপ দিকের হাজারো স্মৃতির উল্লেখ রয়েছে। জমিদারের রোষানলে পড়ে ভিটেছাড়া উপেন পথে পথে ঘোরে। কিন্তু পৈতৃক ভিটের স্মৃতি সে ভুলতে পারে না। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের ১ম অংশে কবিতার এ দিকটি প্রকাশ পেয়েছে। যা উদ্দীপক ও কবিতায় অভিন্ন।


ঘ. উদ্দীপকের অংশ দুটি ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার সমগ্রতাকে ধারণ করে না।

 ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায় একটি পুরো কাহিনীর রয়েছে। কাহিনীতে রয়েছে মাত্র দুবিঘা জমির মালিক উপেন। সে শোষকশ্রেণির নিষ্ঠুর শোষকের শিকায়। পরধনলোভী জমিদারের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে ঐ দুইবিঘা জমির ওপর। সাত পুরুষের স্মৃতিবিজড়িত এ ভিটেমাটি উপেন দিতে না চাইলে সে জমিদারের ক্রোধের অনলে নিঃস্ব হয়ে যায়। সর্বস্বান্ত হয়ে উপেন পথে পথে ঘুরতে থাকে। কিন্তু পৈতৃক ভিটের কথা সে ভুলতে পারে না। একদিন চির-পরিচিত গ্রামে ফিরে এলেও চোর অপবাদ পায়।

 উদ্দীপকের অংশ দুটিতে গ্রাম ও দেশের অপরূপ বর্ণনা রয়েছে। রয়েছে অনেক স্মৃতির রোমন্থন। স্মৃতির সে গ্রাম হাতছানি দিয়ে ডাকে। মন ছুটে যেতে চায় অবারিত সে মাঠ-প্রান্তরে, ঢেউ খেলানো ধানের খেতে। এ বর্ণনা ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার আংশিক মাত্র। কোনোভাবেই সমগ্রতায় ধারেকাছে নয়।

 উদ্দীপক ও কবিতার বিশ্লেষণে বলা যায়, কবিতায় একটি জীবনের পুরো কাহিনী বিমূর্ত হয়ে উঠেছে। উদ্দীপকে কেবল কিশোর বযস ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বিষয়টি উঠে এসেছে যা কোনোমতেই কবিতার সমগ্রতাকে ধারণ করে না। অতএব প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

 দুই বিঘা জমি সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

সৃজনজীল প্রশ্ন -৮: নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :

মাত্র একটা টিপ দিতে হয়েছিল করিমকে বর্গাচাষি হিসেবে। স্থানীয় চেয়ারম্যান জলিল সাহেবের জমি সে বর্গা চাষ করে। কারণ তার কোনো জমি নেই। ফসল ফলানোর মৌসুমে করিমের ব্যস্ত সময় কাটে। চাষ করা, ঢেলা ভাঙা, বীজ বোনা- কত ব্যস্ততা!

করিমের পরিশ্রমের কল্যাণে পাটের প্রচুর ফলন হয়। একবুক পানিতে ডুব দিয়ে পাট কাটে করিম। পাট শুকাতেই জলিল সাহেবের লোক আসে, আধাআধি করার বদলে তিন ভাগ করে পাট। এক ভাগ পায় করিম। আর দুই ভাগ চেয়ারম্যানের লোক নিয়ে যায়। মৌন হয়ে বসে থাকে করিম, কখন যে সে চেয়ারম্যানের কাছ থেকে দুই হাজার টাকা ধার নিয়েছে, তা মনে করতে পারে না। এক সময় চোখ ঝাপসা হয়ে আসে।


ক. ডিক্রি শব্দের অর্থ কী? ১

খ. ‘তুমি ভূস্বামী, ভূমির অন্ত নাই’- কথাটি কেন বলা হয়েছে? ২

গ. উদ্দীপকের করিমের চরিত্রের সাথে ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার কোন চরিত্রের সাদৃশ্য রয়েছে? ৩

ঘ.“উদ্দীপকে ও ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায় দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচারের চিরকালীন প্রতিচ্ছবি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে”- মন্তব্যটি বিচার কর। ৪

 

৮ নং প্রশ্নের উত্তর 


ক. আদালতের হুকুম বা নির্দেশ নামার।


খ. ‘তুমি ভূস্বামী, ভূমির অন্ত নাই’- এই চরণটি দ্বারা উপেন রাজার অঢেল ভূসম্পত্তির দিকটিকে বুঝিয়েছে। 

 রাজার বাগান দৈর্ঘ্যে আর প্রস্থে সমান হওয়ার জন্য দু’বিঘা জমির প্রয়োজন ছিল। তাই রাজা উপেনের একমাত্র সম্বল দুই বিঘা জমি কেনার ইচ্ছা প্রকাশ করল। কিন্তু দুই বিঘা জমি বিক্রি করলে উপেনের আর কিছুই থাকে না। তাই আলোচ্য চরণটি দ্বারা উপেন রাজাকে তার অগাধ ভূমির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।


গ. উদ্দীপকের করিম একটি টিপ দিয়ে মিথ্যা দেনার দায়ে অধিকার হারিয়েছে যার সঙ্গে ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার উপেনের ঘটনার মিল রয়েছে।

 ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায় দেখা যায়, মিথ্যা দেনার দায়ে উপেনের করুণ পরিণতি। রাজা উপেনের দুই বিঘা জমি কিনে নিতে চায়। তাই উপেন রাজার কাছে অনেক অনুনয় করে। কিন্তু নিষ্ঠুর রাজা মিথ্যা দেনার দায়ে উপেনের জমি দখল করে। ফলে উপেনকে ভিটামাটি ছেড়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে হয়।

 উদ্দীপকে দেখা যায়, বর্গাচাষি হিসেবে করিম একটা টিপ দিয়েছিল, পড়ালেখা জানে না বলে দলিলে কী লেখা ছিল, করিম তা বোঝেনি। পরবর্তী সময় চেয়ারম্যানের লোকজন করিমের কাছ থেকে দুইভাগ পাট নিয়ে মাত্র একভাগ তাকে দেয়। করিম নাকি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে দুই হাজার টাকা ধার নিয়েছিল। এ অন্যায় করিমের মনে অনেক দুঃখ দেয়। তাই বলা যায় যে, ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের দিক থেকে উদ্দীপকের করিম ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার উপেনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।


ঘ. “উদ্দীপক ও ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায় দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচারের চিরকালীন প্রতিচ্ছবি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে”- মন্তব্যটি যথার্থ।

 ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায় দুর্বলের প্রতি সবলের অত্যাচারের চিত্র অঙ্কিত হয়েছে। গরিব উপেনের মাত্র দুই বিঘা জমি আছে। কিন্তু রাজার লোলুপ দৃষ্টি সে জমিতে পড়ায় রাজা উপেনকে জমি বিক্রি করার প্রস্তাব দেয়। যে জমিতে সাত পুরুষের বাস সে জমি উপেন বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায় মিথ্যা দেনার খত দেখিয়ে সত্যিই রাজা উপেনকে ভূমিচ্যুত করেছিলেন। 

 উদ্দীপকের গরিব কৃষক করিম নিজের জমি না থাকায় স্থানীয় চেয়ারম্যান জলিলের জমি চাষ করে। বর্গাচাষি হিসেবে সে একটা টিপসই দিয়েছিল। কিন্তু দলিলে কী লেখা ছিল, তা সে দেখেনি। সমস্ত মৌসুম হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে সে জমিতে পাট ফলায়। কিন্তু চেয়ারম্যানের লোক পাট তিন ভাগ করে দুই ভাগ নিয়ে যায়। কারণ জানতে চাইলে বলে, করিম নাকি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে দু’হাজার টাকা ধার নিয়েছিল। এখানে মূলত পেশি শক্তি বলে চেয়ারম্যান করিমের ফসল আত্মসাৎ করেছে। 

 তাই উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে প্রশ্নোল্লিখিত মন্তব্যটির যথার্থতা প্রমাণিত হয়।

দুই বিঘা জমি সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

সৃজনজীল প্রশ্ন-৯: নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :

বাপ মাকে হারানোর পরই নিলয় বিদেশে পাড়ি জমিয়েছিল। যাওয়ার সময় ভেবেছিল দেশে আর তার নাড়ির যোগ রইল না। উচ্চ শিক্ষিত হওয়ায় নিলয় বিদেশে উন্নতি করল। নানা দেশে বেড়ানো, হাজারো মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের সঙ্গে পরিচিত হলো, কিন্তু কখনই সে জন্মস্থানকে ভুলতে পারল না। প্রায় দশ বছর পর একদিন নিলয় আবার তার গ্রামে ফিরে এলো। বাড়ির প্রাচীন প্রাচীরের কাছে বসতেই মনে হলো- প্রাচীর তাকে জিজ্ঞেস করছে এতদিন কোথায় ছিলে? খানিক বাদে নিলয়ের চোখ ঝাপসা হয়ে এলো। 


ক. কে সন্ন্যাসীবেশে দেশে দেশে ফিরে? ১ 

খ. ‘একদিন শেষে ফিরিবারে দেশে বড়ই বাসনা হলো’- ব্যাখ্যা কর। ২ 

গ. উদ্দীপকে ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার কোন দিকটি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা কর। ৩ 

ঘ.উদ্দীপকটি ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার সমগ্র ভাবকে প্রকাশ করে না- মন্তব্যটি মূল্যায়ন কর। ৪

 

৯নং প্রশ্নের উত্তর 


ক. উপেন সন্ন্যাসীবেশে দেশে দেশে ফিরে।


খ. ‘একদিন শেষে ফিরিবারে দেশে বড়ই বাসনা হলো’- আলোচ্য চরণটি দ্বারা জন্মভূমিতে ফিরে যাওয়ার জন্য উপেনের ইচ্ছা প্রকাশ পেয়েছে।

 ভিটেমাটি হারিয়ে উপেন প্রায় পনেরো-ষোলো বছর বিভিন্ন স্থানে ঘুরেছিল, ভূমি হারালেও উপেন নাড়ির টান ছাড়তে পারেনি। তাই বহু বছর পরও নিজগ্রামে ফেরার জন্য উপেনের মনে টান অনুভূত হলো। মূলত মাতৃভূমির টান কখনই উপেক্ষণীয় নয়। আলোচ্য চরণ দ্বারা এটাই প্রকাশ করা হয়েছে।


গ. অনেক বছর জন্মভূমি থেকে দূরে থেকেও উপেন জন্মস্থানের টান অনুভব করেছে। ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার জন্মভূমির প্রতি টানের দিকটি ফুটে উঠেছে আলোচ্য উদ্দীপকে।

 ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায় উপেন ভূমিচ্যুত হয়ে বিশ্বের পথে বেরিয়ে পড়ল। যেখানেই উপেন ঘুরল আর যত কিছুই দেখল, কিন্তু হারানো সেই দুই বিঘা জমির প্রতি ভালোবাসা ভুলতে পারল না। প্রায় পনেরো-ষোলো বছর পরে একদিন উপেন নিজ গ্রামে এসে হাজির হলো। জন্মভূমির মাটিতে পা রেখে উপেনের হৃদয় জুড়িয়ে গেল। এতে জন্মভূমির প্রতি তার গভীর ভালোবাসার প্রকাশ ঘটেছে।

 ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার এ দিকটির প্রকাশ ঘটেছে আলোচ্য উদ্দীপকে। বাপ-মাকে হারানোর পর উদ্দীপকের নিলয় বিদেশে গিয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরল। অনেক উন্নতি করল। কিন্তু জন্মভূমি আর ভিটেমাটিকে ভুলতে পারল না। অবশেষে প্রায় দশ বছর পর সে গ্রামের বাড়িতে ফিরে এলো। চিরচেনা সেই পুরনো প্রাচীরের কাছে বসতেই হৃদয়ে আবেগের জোয়ার এলো। নিলয় অনুভব করল যে, বুড়ো প্রাচীর যেন তার সঙ্গে কথা বলছে। জন্মস্থানের প্রতি ভালোবাসার নিলয়ের দু'চোখ ঝাপসা হয়ে এলো। সুতরাং বলা যায়, ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায় প্রকাশিত জন্মভূমির প্রতি টানের দিকটিই উদ্দীপকে ফুটে উঠেছে।


ঘ. উদ্দীপকে শুধু স্বদেশের প্রতি টানের বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে, যা ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার সমগ্র ভাব প্রকাশ করে না।

 ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায় উপেনের ভূসম্পত্তি হারানোর পাশাপাশি তার মাতৃভূমির অপার সৌন্দর্যের বর্ণনা এবং পরবর্তীতে দেশে ফিরে লাঞ্ছিত হবার চিত্রকল্প ফুটে উঠেছে যা উদ্দীপকের সাথে সম্পূর্ণরূপে সাদৃশ্য প্রকাশ করে না।

 ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায় মূলত লুটেয়া, বিত্তবানদের স্বরূপ তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়াও কবিতাটিতে উপেনের জন্মভূমির প্রতি প্রগাঢ় মমত্ববোধ প্রকাশিত হয়েছে। এই মমত্ববোধ প্রকাশের উদ্দেশ্যে এতে বাংলার প্রকৃতির অকৃত্রিম বর্ণনা ফুটে উঠেছে। অপরপক্ষে উদ্দীপকে এ বিষয়গুলোর মধ্যে শুধু জন্মভূমির প্রতি মমত্ববোধের বিষয়টিই প্রকাশ পেয়েছে।

 উদ্দীপকে দেখা যায়, নিলয় বাপ মা হারিয়ে বিদেশে গিয়ে অনেক স্থান ঘুরল। অনেক উন্নতিও করল, কিন্তু স্বদেশের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা কখনই বিসর্জন দিতে পারেনি। এতে ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায় প্রকাশিত উপেনের স্বদেশপ্রেমেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। তবে এই বিষয়টি ছাড়াও আলোচ্য কবিতার ভাব আরও সম্প্রসারিত। সেই ভাব উদ্দীপকে অনুপস্থিত থাকায় উদ্দীপকটি ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার সমগ্র ভাব ধারণ করে না। 

দুই বিঘা জমি সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

সৃজনজীল প্রশ্ন -১০: নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :

ছোটবেলার গল্প করতে গিয়ে দাদু বললেন, গ্রামের পাঠশালায় আমরা দলবেঁধে যেতাম। হৈ হৈ রৈ রৈ করে দলবেঁধে ফিরে আসতাম। মাথায় তখন দুরন্তপনার ষোলোকলাই পূর্ণ ছিল। কখনো নদীতে সাঁতার কাটতাম। কখনো ক্লাস ফাঁকি দিয়ে আমলকী কুড়াতে যেতাম। ভাদ্রে তাল কুড়াতে বেশ ভালো লাগত। আর জ্যৈষ্ঠ মাসে রাতে ঘুম হতো না। পাকা আমের স্বাদ জিভে লেগেই থাকত। আর ‘কালবৈশাখী আসত’ আশীর্বাদ নিয়ে। তখন অন্ধের মতো ছুটতাম আমতলায়। এখন অনেক বড় হয়ে গেছি। বয়সের সাক্ষ্য দিচ্ছে পাকা চুল। একান্তে শুধু মনে বাজে শৈশব স্মৃতি। এখনো শুনতে পাই; সেই দুরন্ত পদধ্বনি।


ক. কে উপেনকে সপ্তম সুরে গালি দিতে লাগল? ১

খ. রাজার কথা শুনে উপেনের চোখে জল আসে কেন? ২

গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার সাদৃশ্য নিরূপণ কর। ৩

ঘ.“উদ্দীপকটি ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার একটি দিক প্রস্ফুটিত করলেও উভয়ের মধ্যে ভাবগত ভিন্নতা রয়েছে”- মন্তব্যটি বিচার কর। ৪

 

১০নং প্রশ্নের উত্তর 


ক. মালি উপেনকে সপ্তম সুরে গালি দিতে লাগল।


খ. রাজার কথা শুনে হৃদয়ের কষ্টে উপেনের চোখে জল আসে। 

 বহুদিন পর উপেন নিজের চির পরিচিত গ্রামে ফিরে আসে। ক্লান্ত-শ্রান্ত উপেন প্রাচীরঘেঁষা আমগাছটির নিচে বসে পরম শান্তি অনুভব করে। সেখানে বসে বসে ছোটবেলার স্মৃতিচারণ করছিল। এরই মধ্যে বাতাসের ঝাঁপটায় দুটি পাকা আম পড়ে তার কোলের কাছে। আম দুটিকে সে জননীর স্নেহের দান মনে করে গ্রহণ করে। আর তখনই ছুটে আসে মালী। উপেনকে তারা ধরে নিয়ে যায় রাজার কাছে। জমিদার উপেনকে সাধুবেশী চোর বলে আখ্যায়িত করে। তখন এ চরম অপমানের নীরব কষ্টে উপেনের চোখে জল আসে।


গ. উদ্দীপকের দাদু তার বাল্যকালের স্মৃতিচারণ করেছেন, যার সঙ্গে ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার উপেনের বাল্যকালের সাদৃশ্য রয়েছে।

 ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায় রয়েছে। উপেন প্রায় পনেরো-ষোলো বছর পর যখন তার ভিটায় ফিরে আসল তখন মনের পাতায় বাল্যকালের স্মৃতি ভেসে উঠল। ঝড়ের রাতে উপেনের ঘুম হতো না- খুব ভোরে আম কুড়াতো দু’হাত ভরে। স্তব্ধ দুপুরে পাঠশালা থেকে উপেন দুরন্তপনা করত। শৈশবের সেসব স্মৃতি আজ মনের পাতায় অক্ষয় হয়ে আছে। কিন্তু সে জীবন উপেন আর কোথাও খুঁজে পাবে না। ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার এ ভাব উদ্দীপকে লক্ষণীয়।

 উদ্দীপকের দাদু বহু আগেই তার শৈশব আর কৈশোরকাল অতিক্রম করেছেন। কিন্তু তার কানে এখনও সেসব দিনের দুরন্ত পদধ্বনি বেজে ওঠে। তিনি বাল্যকালে দলবেঁধে পাঠশালায় যেতেন দুপুরে নদীতে সাঁতার কাটতেন কখনো বা পাঠশালা ফাঁকি দিয়ে আমলকী কুড়াতে যেতেন। জ্যৈষ্ঠ মাসে আমের দিনে দাদুর রাতে ঘুম হতো না। খুব ভোরে আম কুড়াতে যেতেন। ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায় উপেনের দুঃখ কষ্ট বঞ্চনা ছাড়াও স্মৃতিমধুর ছেলেবেলার বর্ণনা আছে যা পরিণত বয়সী উপেনকে হারানো দিনে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। এই স্মৃতিচারণের দিক থেকে কবিতাটির সাথে উদ্দীপকের সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়।


ঘ. উদ্দীপকটি ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার একটি দিক প্রস্ফুটিত করলেও উভয়ের মধ্যে ভাবগত ভিন্নতা রয়েছে- মন্তব্যটি যথার্থ।

 ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায় উপেন যখন বাল্যকালের স্মৃতিচারণ করছে, তখন তার জীবন দুর্বিষহ। তার মাত্র দুই বিঘা জমি ছিল। কিন্তু রাজা তা কেড়ে নিয়েছে। ফলে উপেন পথের ভিখারিতে পরিণত হয়েছে। প্রায় পনেরো-ষোলো বছর পর যখন সে পুরনো ভূমিতে পদার্পণ করল, তখন তার চিত্তে বাল্যকালের কথা স্মরণ হওয়ার একমাত্র কারণ হলো বাল্যকালে উপেনের জীবনে প্রাচুর্য ছিল। কিন্তু আজ সে পথের ভিখারি। 

 উদ্দীপকের দাদু জীবনের শেষপ্রান্তে এসে উপস্থিত হয়েছেন। জীবনের সমস্ত স্মৃতি এখন তার চিত্তে এসে ভিড় জমাচ্ছে। বস্তুত জীবনের দ্বারপ্রান্তে এসে স্মৃতিচারণ সুখের কথাই সাক্ষ্য দেয়। অর্থাৎ অবস্থানগত দিক থেকে তিনি একজন সুখী মানুষ। সাময়িকভাবে বাল্যকালের কথা তার মনে হাহাকার জাগায়। কারণ তিনি সে দুরন্ত সময় আর কখনই ফিরে পাবেন না। তবুও বাল্যকালের স্মৃতি তাকে যন্ত্রণা দেয় না। মনের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার করে না।

 সুতরাং বলা যায় যে, উদ্দীপকটি ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার উপেনের বাল্যকালকে প্রস্ফুটিত করলেও উভয়ের মধ্যে ভাবগত ভিন্নতা রয়েছে।

 দুই বিঘা জমি সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

সৃজনশীল প্রশ্নব্যাংক

 

সৃজনজীল প্রশ্ন-১১: হাশেম মিয়া একজন গরিব কৃষক। প্রতিবেশী করিমের ক্রোধের কবলে পড়ে হাশেম মিয়া জমিজমা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায়। ভিটে ছাড়া হয়ে হাশেম মিয়া অসহায়ের মতো পথে পথে ঘুরে বেড়ায়। নিজ ভিটার স্মৃতি তাকে কাতর করে তোলে।

ক. উপেন কাকে ধিক্কার দিয়েছিল? ১

খ. উপেন সাধুবেশ ধারণ করে কেন? ২

গ. উদ্দীপকের হাশেম মিয়া চরিত্রের সাথে ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার কোন চরিত্রের সাদৃশ্য রয়েছে? নির্ণয় কর। ৩

ঘ. উদ্দীপকের করিমের আচরণ ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার আলোকে মূল্যায়ন কর। ৪


সৃজনজীল প্রশ্ন-১২: “ধনধান্য পুষ্প ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা

তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা

স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সে দেশ স্মৃতি দিয়ে ঘেরা

এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি

সকল দেশের রানি সে যে আমার জন্মভূমি

সে যে আমার জন্মভূমি।”


ক. কে জল নিয়ে ঘরে যায়? ১

খ. ‘ছায়াসুনিবিড় শান্তির নীড় ছোটো ছোটো গ্রামগুলি’-ব্যাখ্যা কর। ২

গ. উদ্দীপকের সাথে ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার কোন অংশের সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা কর। ৩

ঘ. উদ্দীপকটি ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার মূলভাবকে স্পর্শ করে না- মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ কর। ৪

দুই বিঘা জমি সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর, দুই বিঘা জমি পদ্যাংশ, দুই বিঘা জমি কবিতাংশ, দুই বিঘা জমি সৃজনশীল প্রশ্ন, দুই বিঘা জমি MCQ


নতুন নতুন সাজেশান্স ও নোট পেতে আমাদের Facebook Page এ Like দিয়ে রাখবেন। এছাড়াও চ্যানেলে এড হতে পারেন সবার আগে আপডেড পেতে।


🕮 🕮  সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরপত্র : অতিথির স্মৃতি

🕮 🕮  সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরপত্র : পড়ে পাওয়া

🕮 🕮  সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরপত্র : তৈলচিত্রেরভূত

🕮 🕮  সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরপত্র : এবারের সংগ্রামস্বাধীনতার সংগ্রাম

🕮 🕮  সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরপত্র : আমাদের লোকশিল্প

🕮 🕮  সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরপত্র : সুখী মানুষ

🕮 🕮  সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরপত্র : বাংলা নববর্ষ

🕮 🕮  সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরপত্র : মংডুর পথে

🕮 🕮  সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরপত্র : বাংলা ভাষার জন্মকথা

🕮 🕮  সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরপত্র : ভাব ও কাজ



নিত্য নতুন সকল আপডেটের জন্য জয়েন করুন

Telegram Group Join Now
Our Facebook Page Join Now
Class 8 Facebook Study Group Join Now
Class 7 Facebook Study Group Join Now
Class 6 Facebook Study Group Join Now

Post a Comment