মানবধর্ম পদ্যাংশ সকল সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর - অষ্টম শ্রেনি (PDF)

মানবধর্ম পদ্যাংশ সকল সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর - অষ্টম শ্রেনি (PDF), মানবধর্ম পদ্যাংশ সকল সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর PDF
Follow Our Official Facebook Page For New Updates


Join our Telegram Channel!

মানবধর্ম পদ্যাংশ সকল সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর PDF | Class 8 Monob Dhormo All Creative Questions and Answers

নিচে মানবধর্ম গল্পের সকল সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরপত্র পিডিএপ আকারে দেয়া রয়েছে। 


মানবধর্ম পদ্যাংশ সকল সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর - অষ্টম শ্রেনি (PDF)

সৃজনজীল প্রশ্ন -১:   নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:

জগৎ জুড়িয়া একজাতি আছে

সে জাতির নাম মানুষ জাতি;

এক পৃথিবীর স্তন্যে লালিত

একই রবি শশী মোদের সাথী।

বাহিরের ছোপ আঁচড়ে সে লোপ

ভিতরের রং পলকে ফোটে

বামুন, শূদ্র, বৃহৎ, ক্ষুদ্র

কৃত্রিম ভেদ ধুলায় লোটে।

মানবধর্ম পদ্যাংশ সকল সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

ক. ‘ক‚পজল’ অর্থ কী? 

খ. জাতপাত নিয়ে বাড়াবাড়ি করা উচিত নয় কেন? ব্যাখ্যা কর। 

গ. উদ্দীপক ও ‘মানবধর্ম’ কবিতায় মানুষের যে মিল পাওয়া যায় তা আলোচনা কর। 

ঘ. উদ্দীপক ও ‘মানবধর্ম’ কবিতায় যে ধর্মচর্চার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে তা মূল্যায়ন কর। মানবধর্ম পদ্যাংশ সকল সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর


 ১নং প্রশ্নের উত্তর   


ক. ‘ক‚পজল’ অর্থ কুয়োর পানি।


খ. জাতপাত অপেক্ষা মানুষ হিসেবে মানুষ জাতির পরিচয়টাই বড় বলে জাতপাত নিয়ে বাড়াবাড়ি করা উচিত নয়।

 মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও মানবতাবোধ লালন করেই যথার্থ মানুষ হতে হয়। এক্ষেত্রে জাতপাতের প্রশ্ন অবান্তর। কেননা জন্ম কিংবা মৃত্যুর সময় মানুষ কোনো ধর্মের জাতের চিহ্ন ধারণ করে না। তাই জাতপাত নিয়ে বাড়াবাড়ি করা উচিত নয়।


গ. উদ্দীপকে পৃথিবীর সকল ধর্ম ও জাতির মানুষকে এক ‘মানুষ জাতি’ হিসেবে মনে করা হয়েছে। যা ‘মানবধর্ম’ কবিতার মূল ভাবের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।

 পৃথিবীর সকল মানুষের সবচেয়ে বড় পরিচয় হলো সে একজন মানুষ। জাত-পাত, উঁচু-নিচু কিংবা ধর্মীয় পরিচয় মানুষের মূল পরিচয় হিসেবে ধারণ করে না। পৃথিবী আমাদের সবাইকে একই আদর স্নেহে বড় করে তোলেন। প্রকৃতি মানুষের মধ্যে কোনো বিভেদমূলক আচরণ করে না।

 উদ্দীপকে মানুষ জাতির প্রকৃত স্বরূপ উন্মোচন করা হয়েছে। সারা জগৎ জুড়েই এক জাতির পরিচয় বিদ্যমান। সে জাতির নাম মানুষ জাতি। সকল মানুষই একই পৃথিবীর সন্তান এবং একই সূর্য ও চাঁদ সকল মানুষের অবলম্বন। মানুষের জাত বা বর্ণের পরিচয় মানুষের সৃষ্টি। মানবধর্মের কাছে এসব পরিচয় ধুলায় লুটায়। ‘মানবধর্ম’ কবিতায় সাধক লালন শাহও পৃথিবীতে মানুষের কোনো জাত খুঁজে পান না। তিনি সকল মানুষকে এক হিসেবে বিবেচনা করেছেন।

 এভাবে উদ্দীপক ও ‘মানবধর্ম’ কবিতার মধ্যে মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

মানবধর্ম পদ্যাংশ সকল সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

ঘ. উদ্দীপক ও ‘মানবধর্ম’ কবিতায় মানুষের সংকীর্ণ সম্প্রদায়গত পরিচয়ের চেয়েও মানুষ হিসেবে মানুষের পরিচয়কেই সবচেয়ে বড় করে তোলা হয়েছে। মানুষের চেয়ে অন্য কোনো পরিচয় এখানে প্রাধান্য পায়নি।

 ধর্ম, বর্ণ জাতির ভেদনীতি মানুষই প্রতিষ্ঠা করেছে। স্রষ্টা তার সৃষ্ট জীব মানুষকে সমান আদরে সৃষ্টি ও লালন করেন। কোনো মানুষের জন্য স্রষ্টার আলো, হাওয়া সবচেয়ে বেশি আবার কারো জন্য একটু কম তা কখনই হয় না। স্রষ্টা সকল মানুষকে সমান নজরে বিচার করেন। তাই মানুষে মানুষে ব্যবধান কোনো প্রাকৃতিক বা ঐশ্বরিক বিধান নয়।

 উদ্দীপকে বাইরের চাকচিক্যময় আবরণের চেয়ে ভেতরের মনুষ্যত্ববোধ সম্পূর্ণ মানুষকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। বাইরে একজন মানুষ সাদা-কালো, নারী-পুরুষ যাই হোক না কেন ভেতরে সবার সমান রঙের রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে। তেমনিভাবে নানা জাত-পাত দিয়ে মানুষের মধ্যে বিভেদ একটি বাইরের বিষয়। মৌলিক গুণাবলির বিচারে সব মানুষই এক সমান। তাই মানুষের জাত, ধর্ম ইত্যাদির পরিচয়ের চেয়ে মানুষরূপে পরিচয়ই সবচেয়ে গুরুত্ব বহন করে। মানবধর্ম, কবিতায় ও জাত-ধর্মের চেয়ে মানুষের মানবিক পরিচয়কেই প্রধান করে তুলে ধরা হয়েছে। লালন জাতভেদ প্রথার স্বরূপ বুঝতে পারেন নি। তার কাছে মানুষের একমাত্র পরিচয় সে মানুষ।

 মনুষ্যধর্মই মানুষের জন্য শেষ কথা। ধর্ম-বর্ণের বিভেদ তৈরি করে আমরা মানুষের প্রকৃত পরিচয়কে সবার সামনে খাটো করে তুলছি। পৃথিবীতে বাইরের চেহারায় মানুষের মধ্যে সাদা-কালোর ব্যবধান থাকলেও সব মানুষের ভেতরে রং এক ও অভিন্ন। তাই জাতধর্মের পরিচয়কে প্রধান করে যারা বাড়াবাড়ি  করে, তারা মানবধর্মের প্রকৃত সত্য দিকটি উপেক্ষা করেছে। উদ্দীপক ও মানবধর্ম কবিতায় সুস্পষ্টভাবে জাতি ধর্মের কৃত্রিমতা তুলে ধরে মানুষ হিসেবে মানুষের আসল পরিচয়ের মাহাত্ম্য প্রকাশ করা হয়েছে।

 

সৃজনজীল প্রশ্ন -২:   নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :

 জগৎ জুড়িয়া এক জাতি আছে

 সে জাতির নাম মানুষ জাতি

 এক পৃথিবীর স্তন্যে লালিত

 একই রবি শশী মোদের সাথি।

 বাহিরের ছোপ আঁচড়ে সে লোপ

 ভিতরের রং পলকে ফোটে

 বামুন, শূদ্র, বৃহৎ, ক্ষুদ্র

 ‘কৃত্রিম ভেদ ধুলায় লোটে।

মানবধর্ম পদ্যাংশ সকল সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

ক. লালন শাহের গানের বিশেষ বৈশিষ্ট্য কী?  ১

খ. জাতপাত নিয়ে বাড়াবাড়ি করা উচিত নয় কেন?  ২

গ. উদ্দীপকটি ‘মানবধর্ম’ কবিতার সাথে কীভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর। ৩

ঘ.‘কৃত্রিম ভেদ ধুলায় লোটে’- উদ্দীপক ও ‘মানবধর্ম’ কবিতার আলোকে চরণটি মূল্যায়ন কর। ৪

 মানবধর্ম পদ্যাংশ সকল সৃজনশীলমানবধর্ম পদ্যাংশ সকল সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন ও উত্তর

২নং প্রশ্নের উত্তর    


ক. আধ্যাত্মভাব ও মরমি রসব্যঞ্জনা লালন শাহের গানের বিশেষ বৈশিষ্ট্য।


খ. জাতপাত অপেক্ষা মানুষ হিসেবে মানুষ জাতির পরিচয়টাই বড় বলে জাতপাত নিয়ে বাড়াবাড়ি করা উচিত নয়।

 মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও মানবতাবোধ লালন করেই যথার্থ মানুষ হতে হয়। এক্ষেত্রে জাতপাতের প্রশ্ন অবান্তর। কেননা জন্ম কিংবা মৃত্যুর সময় মানুষ কোনো ধর্মের জাতের চিহ্ন ধারণ করে না। তাই জাতপাত নিয়ে বাড়াবাড়ি করা উচিত নয়।


গ. উদ্দীপকে পৃথিবীর সকল ধর্ম ও জাতির মানুষকে এক ‘মানুষ জাতি’ হিসেবে মনে করা হয়েছে। যা ‘মানবধর্ম’ কবিতার মূল ভাবের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।

 পৃথিবীর সকল মানুষের সবচেয়ে বড় পরিচয় হলো সে একজন মানুষ। জাত-পাত, উঁচু-নিচু কিংবা ধর্মীয় পরিচয় মানুষের মূল পরিচয় হিসেবে ধারণ করে না। পৃথিবী আমাদের সবাইকে একই আদর স্নেহে বড় করে তোলেন। প্রকৃতি মানুষের মধ্যে কোনো বিভেদমূলক আচরণ করে না।

 উদ্দীপকে মানুষ জাতির প্রকৃত স্বরূপ উন্মোচন করা হয়েছে। সারা জগৎ জুড়েই এক জাতির পরিচয় বিদ্যমান। সে জাতির নাম মানুষ জাতি। সকল মানুষই একই পৃথিবীর সন্তান এবং একই সূর্য ও চাঁদ সকল মানুষের অবলম্বন। মানুষের জাত বা বর্ণের পরিচয় মানুষের সৃষ্টি। মানবধর্মের কাছে এসব পরিচয় ধুলায় লুটায়। ‘মানবধর্ম’ কবিতায় সাধক লালন শাহও পৃথিবীতে মানুষের কোনো জাত খুঁজে পান না। তিনি সকল মানুষকে এক হিসেবে বিবেচনা করেছেন।


ঘ. মানুষে মানুষে যে কৃত্রিম ভেদাভেদ তা মানবধর্মের বিশাল আঙিনায় এসে ধুলায় লুটোপুটি খায়।

 ‘মানবধর্ম’ কবিতায় লালন মানুষের মধ্যকার জাত-পাতের বিভেদকে সাত বাজারে বিকিয়েছেন। লালনের মতে, জাত-পাতের বিভেদ অনর্থক। কেউ তসবিহ বা মালা জপুক তা শুধুমাত্র এক ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে। এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্ধ বা নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদের অদৃশ্য দেয়াল তৈরি করার কোনো মানে হয় না।

 উদ্দীপকের কবিও মানবতাবাদী লালনের মতো একই সুরে গান গেয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমাদের সকলের শরীরে একই লোহিত রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে। আমরা একই চন্দ্র-সূর্যের আলোতে বেঁচে বেড়ে উঠি। তাহলে আমাদের মধ্যে বামন-শূদ্র আর ক্ষুদ্র-বৃহতের ভেদাভেদ কেন। আমরা এক পৃথিবীর স্তন্যে লালিত হয়ে এক মায়ের সন্তান।

 তাই উপর্যুক্ত আলোচনার শেষে একথা বলা যায় ‘মানবধর্ম’ কবিতার লালনের বক্তব্য এবং উদ্দীপকের কবির বক্তব্যে একই ভাবের অনুরণন ঘটেছে। আর তা হচ্ছে ‘মানুষে মানুষে জাত-পাত নিয়ে ভেদাভেদ হতে পারে না। তাই কৃত্রিম ভেদ ধুলায় লুটোপুটি খায়। মানবধর্ম পদ্যাংশ সকল সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর


সৃজনজীল প্রশ্ন -৩:   নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :

কাঙালির মায়ের শেষ ইচ্ছে ছিল সে ছেলের হাতের আগুন মুখে নিয়ে স্বর্গে যাবে। কিন্তু কাঙালি শত চেষ্টা করেও মায়ের মুখে আগুন দেবার জন্য এক টুকরো কাঠ জোগাড় করতে পারেনি। তার মায়ের শেষ ইচ্ছের কথা শুনে সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিরা তাকে উপহাস করে বলে, নিচু জাত দুলের আবার মুখে আগুন......। যা-যা, দূর হ এখান থেকে।

ক. লালন শাহ কী ধরনের মরমি কবি?  ১

খ. ‘যাওয়া কিংবা আসার বেলায়’ বলতে লালন কী বুঝিয়েছেন? ২

গ. উদ্দীপকের সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের আচরণে, ‘মানবধর্ম’ কবিতার কোন বিপরীত দিক প্রকাশ পেয়েছে? ব্যাখ্যা কর। ৩

ঘ.উদ্দীপকের সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের মতো মানুষের মানসিকতা পরিবর্তনের আহব্বান রয়েছে ‘মানবধর্ম’ কবিতায়- মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ কর। মানবধর্ম পদ্যাংশ সকল সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

 

৩নং প্রশ্নের উত্তর    


ক. লালন শাহ মানবতাবাদী মরমি কবি।


খ. যাওয়া কিংবা আসার বেলায় বলতে কবি জন্ম ও মৃত্যুর সময়কে বুঝিয়েছেন।

 জন্ম বা মৃত্যুর সময় মানুষের মাঝে জাত-ধর্মের কোনো ভেদাভেদ থাকে না। এ সময় গলায় তসবি বা মালাও দেখা যায় না। মানুষই জাত ও ধর্ম ভেদে আলাদা চিহ্ন ধারণ করে এই পরিচয়কে বড় করে প্রকাশ করে। কিন্তু বিধাতার কাছ থেকে আসা বা ফিরে যাবার সময় মানুষ কোনো চিহ্ন বহন করে না।


গ. উদ্দীপকে সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের আচরণে ‘মানবধর্ম’ কবিতার জাতপাতের ভেদাভেদ না করার বিপরীত দিকটি প্রকাশ পেয়েছে।

 ‘মানবধর্ম’ কবিতায় মানুষের মনুষ্যত্বের পরিচয়কেই ঊর্ধ্বে তুলে ধরা হয়েছে। জন্ম বা মৃত্যুকালে মানুষের জাতধর্মের চিহ্ন বহন করে না। জাতের নামে বিভেদ মানুষ পৃথিবীতে সৃষ্টি করে। জাতের পরিচয়কে বড় করে দেখে মানবধর্মকে ধুলায় মিশিয়ে দেয়। অথচ মানুষ্যত্বের পরিচয় দেওয়াতেই মানুষের জন্মের সার্থকতা নিহিত।

 উদ্দীপকে বাঙালি নিম্নবর্ণের হিন্দু রীতি অনুসারে আপনজনের সৎকারে মুখে আগুন দেওয়ার জন্য কাঙালি কাঠ জোগাড়ের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে। মৃত মায়ের শেষ ইচ্ছা পূরণ করার জন্য সমাজের তথাকথিত সম্ভ্রান্তদের দ্বারস্থ হলে তাকে জাতের প্রশ্ন তুলে ব্যঙ্গ-বিদ্রƒপ করা হায়। জাত নিয়ে বাড়াবাড়ির কারণে তাকে উপহাস করে বলা হয় দুলে জাতের মুখাগ্নির প্রয়োজন নেই। জাতের নামে সদ্য মা মারা যাওয়া একটি ছেলেকে কটূক্তি করতে তাদের নীতিতে বাধা দেয় না। জাতের বিভেদই সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের আচরণকে মানবধর্ম কবিতায় কবি নির্দেশিত ব্যবহারের বিপরীত বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে। তাই বলা যায় উদ্দীপকের সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের আচরণ ‘মানবধর্ম’ কবিতার জাতের বিভেদ না করার উপদেশের বিরুদ্ধতার প্রকাশ করে।


ঘ. ‘মানবধর্ম’ কবিতায় উদ্দীপকের সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের বিভেদমূলক মনমানসিকতার পরিবর্তনের আহব্বান জানানো হয়েছে- উক্তিটি যথার্থ।

 ‘মানবধর্ম’ কবিতায় ফকির লালন মানুষের জাত, পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। তার দৃষ্টিতে মনুষ্যত্বের পরিচয়ই মানুষের জন্য সবচেয়ে গৌরবের। জাত ধর্মের ব্যাপারটি যে ঠুনকো তা বোঝাতে গিয়ে বলেছেন জন্ম-মৃত্যুর সময় মানুষের আলাদা কোনো চিহ্ন পরিচয় থাকে না। তাই লালন বলেছেন জগতে জাতের রূপ তিনি দেখতে পাননি।

 উদ্দীপকে কাঙালিকে কাঠ না দিয়ে বিতাড়িত করার মধ্য দিয়ে জাতের বিভেদই প্রকাশিত হয়েছে। কারণ উঁচু জাতের সমাজের সম্ভ্রান্ত মানুষেরা অপেক্ষাকৃত নিচুজাতের মানুষের প্রতি অন্যায় এবং নিষ্ঠুর আচরণ করতে দ্বিধা করে না। জাতপাতের বাড়াবাড়ি সমাজে অনাচার ও অশান্তির সৃষ্টি করে। অথচ মানবধর্ম কবিতায় জাতধর্মের উপর মানুষের মানবধর্মকে বা মানব পরিচয়কে বড় করে দেখান হয়েছে। 

 ‘মানবধর্ম’ কবিতাতেও স্পষ্টভাবে সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের মনমানসিকতা পরিবর্তনের আহব্বান রয়েছে। লালন বলেছেন জাত-পাতের গৌরব সাত বাজারে বিক্রি হয়ে গেছে। তাই এখন আর জাত-পাতের মিথ্যা গৌরব করে লাভ নেই। লালনের এ আহব্বান সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের মানসিকতা পরিবর্তনে সহায়ক।

মানবধর্ম পদ্যাংশ সকল সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

সৃজনজীল প্রশ্ন -৪:   নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :

“শুনহ মানুষ ভাই

সবার উপরে মানুষ সত্য

তাহার উপরে নাই।”

মানবধর্ম পদ্যাংশ সকল সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

ক. লালন শাহ্ কী ধরনের কবি? ১

খ. কবি মানুষকে জাত-ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছেন কেন? ২

গ. উদ্দীপকে ‘মানবধর্ম’ কবিতার যে দিক ফুটে উঠেছে, তার ব্যাখ্যা কর। ৩

ঘ.“উদ্দীপকে ফুটে উঠা দিকটিতে ‘মানবধর্ম’ কবিতার সম্পূর্ণ বিষয় প্রকাশ পায়নি।”-বিশ্লেষণ কর। ৪

 মানবধর্ম পদ্যাংশ সকল সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

৪নং প্রশ্নের উত্তর    


ক. লালন শাহ্ মানবতাবাদী মরমি কবি।


খ. জাত-ধর্ম মানুষের আসল পরিচয় নয় বলে কবি মানুষকে জাত-ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছেন।

 লালন শাহ্ মানুষের জাত-ধর্মের মিথ্যা অহংকার ও বাড়াবাড়িকে অর্থহীন মনে করেন। পৃথিবীজুড়ে জাত, ধর্ম, বর্ণ, গোত্রের যে পরিচয় রয়েছে, গর্ব ও বাড়াবাড়ি করার জন্য তা ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা জাত-ধর্মের চেয়ে মানুষের মনুষ্যত্বের মূল্য অনেক বেশি। তাই মানুষের সবচেয়ে বড় পরিচয় সে মানুষ। 


গ. উদ্দীপকে ‘মানবধর্ম’ কবিতার মানুষ হিসেবে মনুষ্যত্বের শ্রেষ্ঠত্বের দিকটি ফুটে উঠেছে।

 পৃথিবীর সব মানুষের আদি পিতা ও আদি মাতা একজনই। তাই মানুষে মানুষে ভেদাভেদ নয়; বরং জাত-ধর্ম, শ্রেণি-বর্ণ, পেশা-সামাজিকতার ঊর্ধ্বে আমাদের এক অনন্য পরিচয় বিদ্যমান আর তা হলো আমরা মানুষ।

 উদ্দীপকে বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগে রচিত বড়– চণ্ডিদাসের ‘বৈষ্ণব পদাবলীর’ এক অবিনাশী অমর বাণী উচ্চারিত হয়েছে। সেটি হচ্ছে, পৃথিবীর সব মানুষকে ভাই সম্বোধন করে কবি বলছেন, জাত-পাত, ধর্ম-বর্ণ, শ্রেণি-পেশা, জাতি-সামাজিক পরিচয়- এসবের ঊর্ধ্বে আমাদের শ্রেষ্ঠত্ব হলো মানুষ হিসেবে আমাদের মানুষ-পরিচয়। ‘মানবধর্ম’ কবিতার কবিও বলেন, মনুষ্যধর্মই মূলকথা। জন্ম-মৃত্যুকালে কী কোনো মানুষ তসবি বা জপমালা ধারণ করে থাকে? সে সময়তো সবাই সমান। এর মাধ্যমে লালন শাহ্ মূলত মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব যে তার মানুষ পরিচয়ে সেটি প্রমাণ করতে চেয়েছেন। উদ্দীপকেও সেটি ফুটে উঠেছে।


ঘ. উদ্দীপকে ফুটে উঠা দিকটিতে ‘মানবধর্ম’ কবিতার মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব যে মানুষ পরিচয়ে সে বিষয়টি ফুটে উঠেছে মাত্র। কবিতায় প্রকাশিত অন্য বিষয়গুলো ফুটে ওঠেনি।

 সমরূপ মানবীয় বৈশিষ্ট্যে বিশ্বের মানবসমাজ এক ও অভিন্ন পরিবারভুক্ত। চিন্তা ও কর্মে, বিবেক ও শক্তিতে, হৃদয়ধর্ম ও নান্দনিকবোধে পৃথিবীতে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব অবিসংবাদিত। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে অজ্ঞ, স্বার্থান্বেষী ও ক্ষমতাদর্পী কিছু মানুষ হীন উদ্দেশ্যে মানুষে মানুষে সংকীর্ণ ভেদাভেদ সৃষ্টি করতে প্রয়াসী। কিন্তু মানুষের আসল পরিচয় তার মনুষ্যত্বে, তার সবচেয়ে বড় ধর্ম ‘মানবধর্ম’।

 উদ্দীপকে বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগে বৈষ্ণব পদাবলির অন্যতম কবি বড়– চণ্ডিদাস পৃথিবীর সব মানুষকে ভাই সম্বোধন করে বলেন, জাত, পাত, ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি পেশা-সামাজিক পরিচয় এসবের ঊর্ধ্বে আমাদের শ্রেষ্ঠত্ব হলো মানুষ হিসেবে আমাদের মানুষ পরিচয়। উদ্দীপকের এ অমর মর্মবাণীতে ‘মানবধর্ম’ কবিতার মানবতাবাদী চেতনার দিকটি ফুটে উঠেছে। ‘মানবধর্ম’ কবিতার মানবতাবাদী মরমি কবি লালন শাহ্ও বলেন, মানুষের মনুষ্যধর্মই মূলকথা। উদ্দীপকের সাথে ‘মানবধর্ম’ কবিতার সাদৃশ্যপূর্ণ এ দিকটিই একমাত্র বিষয় নয়, কবিতায় আরও অন্যান্য বিষয় রয়েছে।

 উল্লিখিত আলোচনায় বলা যায়, উদ্দীপকে ফুটে উঠা দিকটিতে ‘মানবধর্ম’ কবিতার সম্পূর্ণ বিষয় প্রকাশ পায়নি।  মানবধর্ম পদ্যাংশ সকল সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

মানবধর্ম পদ্যাংশ সকল সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

সৃজনজীল প্রশ্ন -৫:   নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :

গনি মিয়া ও হরিপদ রাধিকাপুর গ্রামের দুই গরিব কৃষক। তাদের বউ-ঝিয়েরা একই পুকুরে থালাবাসন মাজে, কাপড় কাচে। গ্রামের সবাই একই কুয়ার পানি পান করে। এ-বাড়ির তরকারির বাটি ও বাড়িতে পাঠানো হয়। ঈদ-পূজোয় তারা আনন্দ ভাগাভাগি করে। আবার দুঃখ ও কষ্টেও হয় পরস্পর সমব্যথী। রাধিকাপুর সকল সম্প্রদায়ের শান্তির স্থান।

ক. লালন শাহ্-এর গুরু কে ছিলেন?  ১

খ. ‘ক‚পজল’ ও ‘গঙ্গাজল’ কীভাবে অভিন্ন সত্তা? বুঝিয়ে লেখ।  ২

গ. উদ্দীপকে ‘মানবধর্ম’ কবিতার কোন আদর্শবোধের পরিচয় মেলে? ব্যাখ্যা কর। ৩

ঘ.“উদ্দীপকের মূলভাব ও ‘মানবধর্ম’ কবিতার মূলভাব যেন একই ধারায় প্রবাহিত।” মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর। ৪

 

৫নং প্রশ্নের উত্তর   

 

ক. লালন শাহের গুরু ছিলেন সিরাজ সাঁই।


খ. সব জলের মূলেই রয়েছে জল, তাই ক‚পজল ও গঙ্গাজল অভিন্ন সত্তা।

 জল যখন ক‚পে থাকে, তখন তাকে ক‚পজল বলা হয়, যখন গঙ্গায় থাকে, তখন তাকে গঙ্গাজল বলে। আবার জলকে ঠাÐা করা হয় তখন বরফ বলা হয়। কিন্তু শত রূপভেদ সত্তে¡ও জলের ধর্মে পরিবর্তন সাধিত হয় না। জলের ধর্ম সে জল। কোনো পাত্রে কিংবা কোনো স্থানে গেলেই জলের বর্ণ, গন্ধ ও ধর্ম ভিন্ন হয়ে যায় না। শুধু পাত্র অনুসারে ভিন্ন নামকরণ হয়।


গ. উদ্দীপকে ‘মানবধর্ম’ কবিতার মানবতাবোধের পরিচয় মেলে।

 জাত ও ধর্মবিভেদ আমাদের সমাজব্যবস্থার একটি ঘৃণ্য সংস্কার। এর ফলে এক জাতি বা ধর্মের মানুষ অন্য জাতি বা ধর্মের মানুষের থেকে নিজেদেরকে শ্রেষ্ঠ মনে করে। এতে পরস্পরের মধ্যে হিংসাত্মক মানসিকতার উদ্ভব হয় যা সমাজ জাতির জন্য ক্ষতিকর। এই ধরনের মানসিকতার বিপরীত রূপেরই প্রতিফলন দেখা যায় উদ্দীপক ও ‘মানবধর্ম’ কবিতায়।

 ‘মানবধর্ম’ কবিতায় মানবধর্মের জয়গান গাওয়া হয়েছে। সবকিছুর ঊর্ধ্বে মানুষ। তাই মানুষের সঙ্গে জাত, পাত, ধর্ম, বর্ণের তুলনা করা চলে না। মানুষে মানুষে বৈষম্য সৃষ্টি করাও উচিত নয়। কারণ মানুষ পরিচয়ের ঊর্ধ্বে আর কোনো পরিচয় থাকতে পারে না।

 উদ্দীপকে রাধিকাপুর গ্রামের মানুষ পরম স¤প্রীতিতে বাস করে। তাদের মধ্যে কোনো ধর্মীয় বৈষম্য নেই। হিন্দু-মুসলিম সবাই একে অন্যের বাড়িতে স্বাভাবিকভাবে যাতায়াত করে। কেউ কাউকে বৈষম্যের চোখে দেখে না। এমনকি উৎসবও মিলেমিশে পালন করে। বলা যায়, উদ্দীপকে কবিতার মানবধর্মের পরিচয় মেলে।


ঘ. উদ্দীপকের মূলভাব হলো মানবতাবোধ, যা ‘মানবধর্ম’ কবিতারও মূলভাব। তাই বলা যায় মন্তব্যটি যথার্থ।

 জাত ও ধর্মবিভেদ আমাদের সমাজব্যবস্থার একটি ঘৃণ্য সংস্কার। এর ফলে একজাতি বা ধর্মের মানুষ অন্য জাতি বা ধর্মের মানুষের থেকে নিজেদেরকে শ্রেষ্ঠ মনে করে। এতে পরস্পরের মধ্যে হিংসাত্মক মানসিকতার উদ্ভব হয়, যা সমাজ ও জাতির জন্য ক্ষতিকর। এই ধরনের মানসিকতার বিপরীত রূপেরই প্রতিফলন দেখা যায় উদ্দীপক ও ‘মানবধর্ম’ কবিতায়।

 ‘মানবধর্ম’ কবিতায় মানবতার কথা ধ্বনিত হয়েছে। জাত-পাত, ধর্ম-বর্ণের পরিচয় কখনো বড় হতে পারে না। মানুষের বড় পরিচয় সে মানুষ। তাই মানুষে মানুষে বৈষম্য সৃষ্টি করা উচিত নয়। কেননা জন্ম বা মৃত্যুর সময় কারো জাতের চি‎হ্ন থাকে না। তাই মানুষে মানুষে বৈষম্য না করে স¤প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ থাকতে হয়। অসাম্প্রদায়িক নীতির জয়গান গাইতে হয়।

 তাই বলা যায়, উদ্দীপকের মূলভাব ও ‘মানবধর্ম’ কবিতার মূলভাব একই ধারায় প্রবাহিত।

 

সৃজনজীল প্রশ্ন -৬:  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :

“সবারে বাসিব ভালো, করিব না আত্মপর ভেদ

সংসারে গড়িব এক নতুন সমাজ

মানুষের সাথে কভু মানুষের রবে না বিচ্ছেদ-

সর্বত্র মৈত্রীর ভাব করিবে বিরাজ,

হিংসা-দ্বেষ রহিবে না, কেহ কা’রে করিবে না ঘৃণা

পরস্পর বাঁধি দিব প্রীতির বন্ধনে

বিশ্ব জুড়ি এক সুরে বাজিবে গো মিলনের বীণা

মানব জাগিবে নব জীবন-স্পন্দনে।”

মানবধর্ম পদ্যাংশ সকল সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

ক. লোকে কীসের কথা নিয়ে গৌরব করে?  ১ 

খ. ‘মানবধর্ম’ কবিতায় লালনের কী ধরনের মানসিকতা লক্ষ করা যায়? ব্যাখ্যা কর। ২ 

গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘মানবধর্ম’ কবিতার সাদৃশ্য দেখাও। ৩

ঘ.“উদ্দীপকটি ‘মানবধর্ম’ কবিতার মূলভাবের ধারক”- মন্তব্যটি বিচার কর। ৪ মানবধর্ম পদ্যাংশ সকল সৃজনমানবধর্ম পদ্যাংশ সকল সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তরশীল প্রশ্ন ও উত্তর

 

৬নং প্রশ্নের উত্তর    


ক. লোকে জাতের কথা নিয়ে গৌরব করে।


খ. ‘মানবধর্ম’ কবিতায় লালনের অসাম্প্রদায়িক মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে।

 লালনের কাছে মনুষ্যধর্মই মূলকথা। তিনি কোনো জাত-ধর্মে বিশ্বাস করেন না। তাঁর মতে, মানুষ অযথা জাত-ধর্মের বড়াই করে। মানুষ জন্মের সময় কোনো জাত নিয়ে আসে না আবার মৃত্যুর সময় কোনো জাত নিয়ে যায় না। তাই লালন বোঝাতে চেয়েছেন মানবধর্মই মূল ধর্ম।


গ. সকল প্রকার হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে মানবতার প্রাধান্য দেয়ার দিক দিয়ে উদ্দীপক ও ‘মানবধর্ম’ কবিতাটি সাদৃশ্যপূর্ণ।

 ‘মানবধর্ম’ কবিতায় কবি জাতের রহস্য উন্মোচন করেছেন। কবির মতে, বিশ্বের সকল মানুষ একই জাতের, ব্যক্তি বা সমাজ ভেদে যেসব জাতের কথা উচ্চারিত হয় তা মূলত ভিত্তিহীন। এই জাতিভেদ মানুষের মাঝে পার্থক্য সৃষ্টি করে, হানাহানি বৃদ্ধি করে।

 উদ্দীপকের কবি ভালোবাসার মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বে মৈত্রীর ভাব স্থাপন করতে চেয়েছেন। কবি বলেছেন, তিনি সবাইকে ভালোবাসবেন। কখনো আপন আর পরের মাঝে পার্থক্য সৃষ্টি করবেন না। ফলে সংসারে সৃষ্টি হবে এক নতুন সমাজ। যে সমাজের মানুষ বিচ্ছেদে বিশ্বাসী হবে না। সর্বত্র মৈত্রীর ভাব বিরাজ করবে। মানুষের মাঝে হিংসা বিদ্বেষের লেশমাত্র থাকবে না। কেউ কাউকে ঘৃণা করবে না। সমাজের প্রত্যেক মানুষ প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হবে। তাই বলা যায়, সবকিছুর ঊর্ধ্বে মানবতার প্রাধান্য দেয়ার দিক দিয়ে উদ্দীপক ও ‘মানবধর্ম’ কবিতাটি সাদৃশ্যপূর্ণ।


ঘ. “উদ্দীপকটি ‘মানবধর্ম’ কবিতার মূল ভাবের ধারক”- মন্তব্যটি যথার্থ।

 ‘মানবধর্ম’ কবিতায় লালন ফকির মানুষের জাত-পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। এখানে কবি মানবধর্মের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। জাত-বিভেদের ধারণা তার কাছে এতটাই মূল্যহীন যে, তিনি জাতের চি‎হ্ন যেখানে সেখানে বিকিয়ে দিয়েছেন। তাই মানবতাবোধই ‘মানবধর্ম’ কবিতার মূল বিষয় হিসেবে গুরুত্ব পেয়েছে।

 মানবতাবোধেরই স্পষ্ট প্রকাশ দেখা যায় উদ্দীপকে। এখানে সব ভেদাভেদের ঊর্ধ্বে সকল মানুষকে নিয়ে মৈত্রীর সমাজ গঠনের অঙ্গীকার করা হয়েছে। এখানে ভালোবাসার ফলে মানুষ হিংসা বিদ্বেষ ভুলে এক সুরে মিলনের সুর ধ্বনিত হয়েছে। এতে মানবতাবোধ ও ভালোবাসার জয় সূচিত হয়েছে। যা ‘মানবধর্ম’ কবিতার মূলভাবকে নির্দেশ করে।

 উল্লিখিত আলোচনায় বলা যায়, উদ্দীপকটি ‘মানবধর্ম’ কবিতার মূলভাবের ধারক।


সৃজনজীল প্রশ্ন -৭:   নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :

মানবজীবনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সত্য হলো- পৃথিবীর প্রত্যেকেই মানুষ, একই পন্থায় সবার জন্ম। দেশ, জাত, পাত্রভেদে কারো জন্মের কোনো ভিন্নতা নেই। কিন্তু পৃথিবীতে আমরা নিজেদেরকে নানা ভাবে ভিন্নতর করে তুলি। দেশ, ধর্ম, সমাজ, পদবি ইত্যাদি ক্ষেত্রে অন্যের চেয়ে নিজেকে বড় করতে চাই। বিশেষ করে জাত, জাতি, পেশা বা ধর্মের ক্ষেত্রেই এ চরিত্র বেশি প্রকট হয়ে ওঠে। কিন্তু এসবে কোনো সার্থকতা নেই। যদি সার্থকতা থাকত, তবে জন্ম ও মৃত্যু প্রক্রিয়ার মাঝেও ভিন্নতা থাকত। অথচ মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে আমাদের তাবৎ পার্থক্য হারিয়ে যায়। একই পরিচয়ে সবাই পাড়ি জমায় মৃত্যুর দেশে।

মানবধর্ম পদ্যাংশ সকল সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

ক. লালন জেতের ফাতা কোথায় বিকিয়েছেন?  ১

খ. ‘ভিন্ন জানায় পাত্র-অনুসারে’ -পঙ্ক্তিটি ব্যাখ্যা কর।  ২

গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘মানবধর্ম’ কবিতার ভাবগত সাদৃশ্য দেখাও। ৩

ঘ.প্রমাণ কর যে, উদ্দীপকের লেখক ও ‘মানবধর্ম’ কবিতার কবি একই মতবাদে বিশ্বাসী। ৪ মানবধর্ম পদ্যাংশ সকল সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

 

৭নং প্রশ্নের উত্তর    


ক. লালন জেতের ফাতা সাত বাজারে বিকিয়েছেন।


খ. ‘ভিন্ন জানায় পাত্র-অনুসারে’ পঙ্ক্তিটি দ্বারা জলের রূপভেদ প্রকাশ করা হয়েছে। 

 জল যখন ক‚পে থাকে, তখন তাকে ক‚পজল বলা হয়, যখন গঙ্গায় থাকে, তখন তাকে গঙ্গাজল বলে। আবার যখন জল ঠাণ্ডা করা হয় তখন বরফ বলা হয়। কিন্তু শত রূপভেদ সত্তে¡ও জলের ধর্মে পরিবর্তন সাধিত হয় না। জলের ধর্ম সে জল। কোনো পাত্রে কিংবা কোনো স্থানে গেলেই জলের বর্ণ, গন্ধ ও ধর্ম ভিন্ন হয়ে যায় না। শুধু পাত্র অনুসারে ভিন্ন নামকরণ হয়।


গ. উদ্দীপকেও মানুষের জন্ম ও মৃত্যু নিয়ে আলোচনা রয়েছে, যা ‘মানবধর্ম’ কবিতার সঙ্গে ভাবগত সাদৃশ্য সৃষ্টি করে।

 ‘মানবধর্ম’ কবিতায়ও কবি জন্ম ও মৃত্যুর কথা উল্লেখ করার মাধ্যমে জাতের পার্থক্য ঘোচাতে চেয়েছেন। কারণ, কবি সংসারে কোনো জাতের পার্থক্য খুঁজে পাননি। কখনো জাতের পার্থক্য তার চোখে পড়েনি। কেউ গলায় মালা পরে, কেউ তসবি পরে এবং নিজেদের মধ্যে জাতধর্মের পার্থক্য ফুটিয়ে তোলে। কিন্তু কবির মতে, মালা আর তসবি পরলেই জাতের পার্থক্য সূচিত হয় না। কারণ মানুষ জন্মের সময় যে রূপে আসে, মৃত্যুর সময়ও সে একই রূপে পৃথিবী ত্যাগ করে।

 উদ্দীপকে মানুষের জন্ম ও মৃত্যু নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। জন্ম ও মৃত্যু মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় ব্যাপার। এর মাধ্যমেই মানুষ পৃথিবীর জীবন শুরু ও শেষ করে। পৃথিবীতে প্রত্যেক মানুষ একই প্রক্রিয়ায় জন্মলাভ করে। গোত্র, সমাজ, পাত্র, জাতি বা ধর্মভেদে জন্মের কোনো পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় না। কিন্তু জন্মের পরই মানুষ নিজেদের মধ্যে জাতি ও ধর্মভেদ সৃষ্টি করে। তাই বলা যায়, উদ্দীপক ও ‘মানবধর্ম’ কবিতায় ভাবগত সাদৃশ্য সূচিত হয়েছে। মানবধর্ম পদ্যাংশ সকল সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর


ঘ. উদ্দীপকের লেখক ও ‘মানবধর্ম’ কবিতার কবি একই মতবাদে বিশ্বাসী।

 ‘মানবধর্ম’ কবিতার কবি জাত নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে মানুষকে বুঝিয়েছেন যে, পৃথিবীতে যেসব জাতের কথা রয়েছে, তা মূলত মানুষেরই সৃষ্টি। গলায় মালা কিংবা তসবি পরলে বাহ্যিক পরিবর্তনই সাধিত হয়, জাতের পরিবর্তন হয় না। শুধু বাহ্যিক রূপ পরিবর্তন করতে পারে।

 উদ্দীপকের লেখক জন্ম ও মৃত্যু সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। পৃথিবীতে মানুষের জীবনের সূচনা ঘটে জন্মের মাধ্যমে আর সমাপ্তি ঘটে মৃত্যুর মাধ্যমে। প্রত্যেক মানুষ সমপ্রক্রিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। এ প্রক্রিয়ার সময় জাত, ধর্ম বা গোত্র কোনোভাবেই চিহ্নিত থাকে না, বরং জন্মের পর মানুষ ধর্ম ও জাত গ্রহণ করে বা নিজেদের ওপরে চাপিয়ে দেয়। বড় জাত নিয়ে অহংকার করে, ছোট জাত নিয়ে লজ্জা অনুভব করে- ধর্ম নিয়ে ঝগড়া করে। কিন্তু মানুষ যখন মৃত্যুমুখে পতিত হয়, তখন জাত-ধর্মের সব বাহ্যিক চিহ্ন বিলুপ্ত হয়ে যায়। মূলত এই আলোচনা দ্বারা উদ্দীপকের লেখক মানুষকে শুধু মানুষরূপে চিহ্নিত করেছেন।

 উল্লিখিত আলোচনায় বলা যায় যে, উদ্দীপকের লেখক ও ‘মানবধর্ম’ কবিতার কবি একই মতবাদে বিশ্বাসী। মানবধর্ম পদ্যাংশ সকল সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর


সৃজনজীল প্রশ্ন -৮:   নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :

সম্রাট বাবর ছিলেন প্রজাপ্রেমিক। দিনের বেলাতে ছদ্মবেশ ধারণ করে পথে পথে ঘুরে প্রজাদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতেন। হঠাৎ একদিন রাস্তায় তিনি দেখতে পান একটি পাগলা হাতির ভয়ে সবাই রাস্তা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে পালাচ্ছে। একটি শিশু রাস্তায় পড়ে আছে তাকে কেউ সরিয়ে নিচ্ছে না। সম্রাট বাবর যখন ছেলেটাকে তুলে আনতে গেলেন তখন সবাই বলল- ‘ও মেথরের সন্তান ওকে তুলে নেয়ার দরকার নেই’। প্রজাপ্রেমিক সম্রাট সকলের কথা উপেক্ষা করে মেথরের সন্তানকে সযতেœ তুলে এনে তার মায়ের কোলে ফিরয়ে দিলেন।


ক. কোন জল হিন্দুদের কাছে পবিত্রতার প্রতীক?  ১ 

খ. ‘লোকে গৌরব করে যথা-তথা’- বলতে কী বোঝানো হয়েছে? ২ 

গ. কোন দিক থেকে সম্রাট বাবরের সঙ্গে লালন শাহ্’র সাদৃশ্য আছে?- ব্যাখ্যা কর। ৩ 

ঘ.‘ও মেথরের সন্তান ওকে তুলে নেয়ার দরকার নেই’- উদ্দীপকের এ কথাটি ‘মানবধর্ম’ কবিতার আলোকে মূল্যায়ন কর। ৪ মানবধর্ম পদ্যাংশ সকল সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

 

৮নং প্রশ্নের উত্তর    


ক. গঙ্গার জল হিন্দুদের কাছে পবিত্রতার প্রতীক।


খ. ‘লোকে গৌরব করে যথা-তথা’ বলতে যেখানে সেখানে জাতপাত বা ধর্ম নিয়ে মানুষের মিথ্যে অহংকার বা বাড়াবাড়িকে বুঝানো হয়েছে।

 ‘মানবধর্ম’ কবিতায় লালন শাহ্ মানবধর্মের জয়গান গেয়েছেন। মানুষ মিথ্যা বড়াই করে জাত, ধর্ম, বর্ণ নিয়ে। এক মানুষ অন্য মানুষের থেকে আলাদা হয়ে যায় জাতের দোহাই দিয়ে। কিন্তু লালন বলেছেন এ গৌরব বা বড়াই মূলত মিথ্যা। যেখানে সেখানে জাতধর্ম নিয়ে গৌরবের কোনো অর্থ নেই। মূলত সব মানুষ সমান।


গ. জাতের বিভেদ না করে মানবধর্মে উদ্দীপ্ত হওয়ার দিক দিয়ে সম্রাট বাবরের সঙ্গে লালন শাহ্র সাদৃশ্য আছে।

  লালন শাহ্ মানবতাবাদী মরমি কবি। তিনি ‘মানবধর্ম’ কবিতায় মানুষের জাতভেদের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করেছেন। তিনি মনে করেন মানুষের জাতভেদ মানুষেরই সৃষ্টি, মানুষই তাদের নিজেদের মাঝে ধর্মের দেয়াল তুলে দেয়। তাই জাতকে তিনি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন না। মনুষ্যধর্মই মূলকথা। জন্ম-মৃত্যুকালে কোনো মানুষ তস্বি বা জপমালা ধারণ করে না- সে সময় সবাই সমান। তাই মনুষ্যসৃষ্ট জাতভেদে ও ধর্মভেদে তিনি বিশ্বাস করেন না।

 উদ্দীপকে সম্রাট বাবরের মধ্যেও লালনের মানসিকতার প্রতিফলন লক্ষণীয়। আর তা হচ্ছে মানুষের প্রতি ভালোবাসা জাতিভেদকে অতিক্রম করেছে। তাই তিনি মেথরের ছেলেকে অনায়াসে হাতির পায়ে পিষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করেছেন। লোকের জাতভেদের কুসংস্কার না মেনে মানবপ্রেমকে বড় করে দেখেছেন। এই দিক দিয়েই সম্রাট বাবরের মনোভাবের সাথে লালনের মনোভাবের সাদৃশ্য আছে।


ঘ. ‘ও মেথরের সন্তান ওকে তুলে নেয়ার দরকার নেই’- উদ্দীপকের এ কথাটিতে জাতিভেদ প্রথার নিষ্ঠুরতা প্রকাশ পেয়েছে।

 মানুষ হিসেবে আমাদের প্রধান ধর্ম হলো মানবতা, ধর্ম, বর্ণ, জাতিগত বিভেদের ঊর্ধ্বে এই মানবতার স্থান। কিন্তু কোনো মানুষ এই মানবতাকে অস্বীকার করে সাম্প্রদায়িকতা তথা মনুষ্যভেদনীতি অবলম্বন করে হীনমানসিকতার পরিচয় দেয়। এই হীন নিষ্ঠুর মানসিকতার প্রকাশ লক্ষণীয় প্রশ্নোল্লিখিত কথাটির মধ্যে। ‘মানবধর্ম’ কবিতায় এই মানসিকতা পরিহার করে সমতার কথা উচ্চারিত হয়েছে।

 ‘মানবধর্ম’ কবিতায় লালন শাহ্ মানুষের পরিচয় সবচেয়ে বড় পরিচয় হিসেবে বিবেচনা করেছেন। ‘মানবধর্ম’ তাঁর কাছে বড় ধর্ম। জাত ও ধর্মভেদে তাঁর কোনো বিশ্বাস নেই। সকল মানুষ পৃথিবীতে সমানভাবে জন্ম নেয়। জাত বা ধর্মের পরিচয় নিয়ে জন্ম নেয় না। তার বিবেচনায় সকল মানুষই সমান মর্যাদার অধিকারী।

 উদ্দীপকে দেখা যায়, সম্রাট বাবর একদিন দেখতে পান পাগলা হাতির ভয়ে সবাই রাস্তা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে পালাচ্ছে। একটি শিশু সেই রাস্তায় পড়ে থাকলেও কেউ তাকে সরিয়ে নিচ্ছে না। সম্রাট বাবর সেই শিশুটি তুলে আনতে গেলে লোকজন উদ্দীপকের আলোচ্য উক্তিটি করেছে। উল্লিখিত আলোচনায় দেখা যায় উদ্দীপকে মানবধর্ম ভুলে জাতিভেদের মানসিকতা প্রকাশ পেয়েছে। ‘মানবধর্ম’ কবিতায় এই জাতিভেদের প্রতি লালন শাহ্’র অবিশ্বাস লক্ষ করা যায়। তিনি ‘মানবধর্ম’ কবিতায় মানবতার জয়গান গেয়ে প্রশ্নোল্লিখিত মন্তব্যটির অযৌক্তিকতা প্রমাণিত করেছেন। মানবধর্ম পদ্যাংশ সকল সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর


সৃজনজীল প্রশ্ন -৯:   নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :

১. কালো আর ধলো বাহিরে কেবল

 ভিতরে সবারই সমান রাঙা

২. জগৎ জুড়িয়া এক জাতি আছে

 সে জাতির নাম মানুষ জাতি।

ক. লালন শাহ্ কত খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন?  ১ 

খ. জলের মাধ্যমে ‘মানবধর্ম’ কবিতায় কীভাবে মানুষকে রূপায়িত করা হয়েছে?- ব্যাখ্যা কর। ২ 

গ. উদ্দীপকের প্রথম কবিতাংশের সাথে ‘মানবধর্ম’ কবিতার সাদৃশ্য নির্ণয় কর। ৩ 

ঘ.‘মানবধর্ম’ কবিতার আলোকে উদ্দীপকের দ্বিতীয় অংশের মূলভাবের যথার্থতা নিরূপণ কর। ৪

 

৯নং প্রশ্নের উত্তর 


ক. লালন শাহ্ ১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন।


খ. ‘মানবধর্ম’ কবিতায় বলা হয়েছে, পাত্রভেদে জলের নাম ভিন্ন হয় কিন্তু তার মূল উপাদান পরিবর্তিত হয় না; তেমনি জাতি-ধর্মভেদে মানুষের পরিচয় ভিন্ন হলেও তার মূল পরিচয় অটুট থাকে।

 গর্তের জলকে বলা হয় কুয়োর জল। গঙ্গায় গেলে সেই জলই হয় গঙ্গার জল। কিন্তু তার মূল উপাদানের কোনো পরিবর্তন হয় না। তেমনি ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের মানুষের পরিচয় ভিন্ন হলেও তার মৌলিক পরিচয়ের কোনো ভিন্নতা হয় না। সে-যে মানুষ এটাই তার বড় পরিচয়। জলের মাধ্যমে ‘মানবধর্ম’ কবিতায় এভাবেই মানুষকে রূপায়িত করা হয়েছে।


গ. উদ্দীপকের প্রথম কবিতাংশের সাথে ‘মানবধর্ম’ কবিতার সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়।

 আমাদের সমাজে কিছু মানুষ আছে যারা মানুষের উপরে জাত পরিচয় ও বেশভ‚ষাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে সাম্প্রদায়িকতার জন্ম দেয়। প্রকৃতপক্ষে মানুষ যেকোনো ধর্মের, বর্ণের বা জাতের হোক না কেন তার ভেতরের রূপ একই। এ বিষয়েরই প্রতিফলন লক্ষণীয় উদ্দীপক ও ‘মানবধর্ম’ কবিতায়।

 ‘মানবধর্ম’ কবিতায় বর্ণিত হয়েছে লালন শাহ্ মানবধর্মে বিশ্বাসী। তিনি বিশ্বাস করেন জাত-পাত, সাম্প্রদায়িকতা এগুলো মানুষের সৃষ্টি। এর সত্যিকারের কোনো ভিত্তি নেই। সকল মানুষের শরীরে একই লাল রক্ত। সকলের মৌলিক বৈশিষ্ট্য একই। এই বিশ্বাসেই তিনি জাতিভেদের ঊর্ধ্বে পৌঁছে গেছেন। উদ্দীপকের প্রথম অংশে বর্ণিত হয়েছে মানুষ বাইরেই কেবল কালো আর ফরসা। এটি মানুষের বাহ্যিক পরিচয়। কিন্তু সব মানুষের ভেতর একই। এদিক থেকে উদ্দীপকের সাথে ‘মানবধর্ম’ কবিতাটি সাদৃশ্যপূর্ণ।


ঘ. উদ্দীপকের দ্বিতীয় অংশে ‘মানবধর্ম’ কবিতার মনুষ্যত্ববোধ প্রস্ফুটিত হয়েছে।

 মানুষ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব। প্রতিটি মানুষের মধ্যে রয়েছে মনুষ্যত্ব। কিন্তু মানুষ তার এ গুণটিকে সাম্প্রদায়িকতার রোষানলে জলাঞ্জলি দেয়। যার ফলে সমাজে হানাহানি ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। প্রকৃতপক্ষে মানুষ যতই জাতবিভেদ নীতি অবলম্বন করে বাড়াবাড়ি করুক না কেন, মানুষের সত্যিকারের পরিচয় সে মানুষ। আর মনুষ্যত্বের এ বিষয়টিরই প্রকাশ ঘটেছে উদ্দীপকের দ্বিতীয় অংশে ও ‘মানবধর্ম’ কবিতায়।

 ‘মানবধর্ম’ কবিতায় জাতি, শ্রেণি, ধর্ম বা বর্ণগত পরিচয়ের মাধ্যমে মানুষকে মূল্যায়ন করা হয়নি। বরং এই ভেদাভেদ গুরুত্বহীন মনে করে সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করা হয়েছে। কেউ তসবি আর কেউ মালা পরলেই তাদের মধ্যে ভিন্নতা সৃষ্টি হয় না। মানুষের প্রকৃত পরিচয় নিরূপিত হয় মনুষ্যধর্মের ভিত্তিতে। অর্থাৎ সকল মানুষের একটিই পরিচয় সেটি হলো মানুষ। উদ্দীপকেও ‘মানবধর্ম’ কবিতার এই সুরই ধ্বনিত হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে, জগতের বিভিন্ন রকমের মানুষ আছে। তাদের মধ্যে বাহ্যিকভাবে ভিন্নতা থাকতে পারে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে জগতের সকল মানুষের একটিই পরিচয়। সেটি হলো আমরা সকলেই এক মানব জাতি। 

 সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপক এবং কবিতায় মূলত মানবধর্মের তথা মনুষ্যত্ববোধের জয়গান করা হয়েছে।

মানবধর্ম পদ্যাংশ সকল সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

সৃজনজীল প্রশ্ন -১০:   নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :

সেজানের বন্ধু সমীর। সেজান মুসলমান আর সমীর হিন্দু কিন্তু তাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। ধর্মীয় কোনো পরিচয় তাদের সম্পর্কের মধ্যে ছেদ সৃষ্টি করতে পারেনি। কারণ, তাদের কাছে মানুষের ধর্মের চেয়ে মনুষ্যত্ববোধটাই বড়। এ মনুষ্যধর্ম মানুষের আসল পরিচয়, কোনো ধর্ম মানুষের পরিচয়ের মাপকাঠি হতে পারে না।


ক. জল কোথায় গেলে তাকে গঙ্গাজল বলা হয়?  ১ 

খ. ‘সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে’- ব্যাখ্যা কর। ২ 

গ. উদ্দীপকটিতে ‘মানবধর্ম’ কবিতার কোন দিকটি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা কর। ৩ 

ঘ.“উদ্দীপকটিতে ‘মানবধর্ম’ কবিতার মূলসুর ধ্বনিত হয়েছে”- উক্তিটির যথার্থতা নিরূপণ কর। ৪


 ১০নং প্রশ্নের উত্তর    


ক. জল গঙ্গায় গেলে তাকে গঙ্গাজল বলা হয়। 


খ. ‘সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে’- এই পঙ্ক্তিটি দ্বারা লালনের জাত সম্পর্কে মানুষের মনের কৌত‚হল বোঝানো হয়েছে।

 লালন একজন মানবতাবাদী মানুষ। তিনি জাত-ধর্মের ঊর্ধ্বে, অর্থাৎ তাঁর আচরণে কোনো জাত বা ধর্মের নিদর্শন চিহ্নিত হয়নি। সারা জীবন তিনি মানবধর্মের চর্চা করেছেন। এই কারণে মানুষের মনে লালনের জাত সম্পর্কে প্রশ্ন জাগে। লালন ফকিরের জাত সম্পর্কে সব লোকে সন্দিহান। কারণ, তিনি বিশেষ কোনো ধর্মের গণ্ডিতে আবদ্ধ নন।


গ. উদ্দীপকটিতে ‘মানবধর্ম’ কবিতায় মানুষের আসল পরিচয়ের দিকটি ফুটে উঠেছে।

 এ পৃথিবীতে ইসলাম, হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ এবং আরও অনেক ধর্ম ও গোত্রের মানুষ বাস করে। তারা একসঙ্গে চলাফেরা করে, বসবাস করে এবং নিজেদেরকে আলাদা জাতি হিসেবে মনে করে। কিন্তু লালন সেই বিষয়টিকে মেনে নিতে পারেননি। কারণ তিনি ধর্মীয় পরিচয় বড় করে না দেখে মানুষের মনুষ্যত্বকে বড় করে দেখেছেন। ‘মানবধর্ম’ কবিতায় সেই মনুষ্যত্বের দিকটিই ফুটে উঠেছে।

 উদ্দীপকের সেজানের বন্ধু সমীর। সেজান মুসলমান আর সমীর হিন্দু। কিন্তু উভয়ের মধ্যে রয়েছে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব। কারণ, তাদের কাছে ধর্মীয় পরিচয়ই বড় পরিচয় নয়, এজন্য ধর্মীয় কোনো পরিচয় তাদের সম্পর্কের মধ্যে ছেদ সৃষ্টি করতে পারেনি। ‘মানবধর্ম’ কবিতার কবিও মানুষের আসল পরিচয়ের কথা বলতে গিয়ে জাতপাতের পরিচয় বর্জন করেছেন। তার কাছে মানুষের মনুষ্যধর্মই বড় মনে হয়েছে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকটিতে ‘মানবধর্ম’ কবিতার মানুষের আসল পরিচয়ের দিকটিই ফুটে উঠেছে।


ঘ. উদ্দীপকটিতে ‘মানবধর্ম’ কবিতার মূলসুর ধ্বনিত হয়েছে। উক্তিটি যথার্থ।

 ‘মানবধর্ম’ কবিতায় কবি মানুষের আসল পরিচয়ের কথা বলেছেন। লালন শাহ্র কাছে মানুষের জাতপাত বড় পরিচয় নয়, বড় পরিচয় মনুষ্যধর্ম। কারণ পৃথিবীতে সকল মানুষ এক ও অভিন্ন। যাদের মধ্যে মনুষ্যত্ববোধ আছে তারাই মানুষ। বাহ্যিক দিক দিয়ে কিংবা মানুষের আচার-আচরণে কোনো রকম পার্থক্য থাকলেও, ভেতরের দিকে সব মানুষ এক, তাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। মানুষের ভেতরে যদি মনুষ্যত্ববোধ থাকে তাহলে সেই মানুষটিই প্রকৃত মানুষের মর্যাদা পায়। এটিই ‘মানবধর্ম’ কবিতার মূলসুর।

 জাত ও ধর্মভেদে মানুষ যে ভিন্নতার কথা বলে তা মূলত অনর্থক। এ বিষয়টি এক ধরনের কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও সাম্প্রদায়িক মানসিকতাসম্পন্ন মানুষের সৃষ্টি। এই জাতবিভেদনীতি সমাজ ও মানুষের জন্য ক্ষতিকর। তাই ‘মানবধর্ম’ কবিতায় জাতবিভেদ অস্বীকার করে মানবধর্মের সুর ধ্বনিত হয়েছে। উদ্দীপকেও এ বিষয়েরই প্রতিফলন লক্ষ করা যায়।

 উদ্দীপকের সেজান ও সমীরের বন্ধুত্বের মধ্যে মানুষের আসল পরিচয়ের দিকটি উঠে এসেছে। উল্লিখিত আলোচনায় বলা যায়, প্রশ্নে উল্লিখিত উক্তিটি যথার্থ।

 

সৃজনশীল প্রশ্নব্যাংক


সৃজনজীল প্রশ্ন-১১:   বাংলা সর্ব ঐশীশক্তির পীঠস্থান। হেথায় লক্ষ লক্ষ যোগী, মুনিঋষি, তপস্বীর পীঠস্থান, সমাধি; সহস্র ফকির দরবেশ অলি-গাজির দরগা পরম পবিত্র। হেথায় গ্রামে হয় আজানের সাথে শঙ্খঘণ্টার ধ্বনি। 


ক. লালন শাহ্’র গুরু কে ছিলেন?  ১

খ. লালন শাহ্ জগৎ সংসারে জাতের রূপ দেখেননি কেন?  ২

গ. উদ্দীপকে ‘মানবধর্ম’ কবিতার কোন দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে? ব্যাখ্যা কর। ৩

ঘ. “উদ্দীপকটি ‘মানবধর্ম’ কবিতার সমগ্রভাব ধারণ করে না”- মন্তব্যটি বিচার কর। ৪


সৃজনজীল প্রশ্ন-১২: মাদার তেরেসা একজন মহীয়সী নারী। তিনি অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি জাত-ধর্মের ভেদাভেদ ভুলে মানবপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে একনিষ্ঠভাবে অসহায় মানুষের সেবা করে যান। গভীর মমতা ও অকুণ্ঠ ভালোবাসা দিয়ে সকলের মুখে হাসি ফোটান। কারণ তিনি সবার ওপরে মানুষকে স্থান দিয়েছেন। মানুষকে ভালোবাসার মাধ্যমেই তিনি নিজের জন্ম সার্থক করতে চেয়েছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, ‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই’।মানবধর্ম পদ্যাংশ সকল সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর


ক. ‘জগৎ’ শব্দের অর্থ কী?  ১

খ. ‘জেতের ফাতা’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?  ২

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বিষয়টি ‘মানবধর্ম’ কবিতায় কীভাবে ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা কর। ৩

ঘ. “মাদার তেরেসার মানুষকে সেবা করার বিষয়টি ‘মানবধর্ম’ কবিতায় অনুপস্থিত”- মন্তব্যের যৌক্তিকতা নিরূপণ কর। ৪


নিত্য নতুন সকল আপডেটের জন্য জয়েন করুন

Telegram Group Join Now
Our Facebook Page Join Now
Class 8 Facebook Study Group Join Now
Class 7 Facebook Study Group Join Now
Class 6 Facebook Study Group Join Now

Post a Comment