রাষ্ট্রচিন্তায় ইমাম গাজ্জালির অবদানসমূহ

রাষ্ট্রচিন্তায় ইমাম গাজ্জালির অবদান আলোচনা কর । Imam Ghazali's contribution to political thought
Follow Our Official Facebook Page For New Updates


Join our Telegram Channel!

প্রশ্ন ॥ রাষ্ট্রচিন্তায় ইমাম গাজ্জালির অবদান আলোচনা কর । Imam Ghazali's contribution to political thought

রাষ্ট্রচিন্তায় ইমাম গাজ্জালির অবদানসমূহ

উত্তর : ভূমিকা : ইমাম আল গাজ্জালিই মধ্যযুগের একমাত্র দার্শনিক যিনি রাষ্ট্রনীতিকে বিজ্ঞান হিসেবে অভিহিত করেছেন। গাজ্জালি তার রাষ্ট্রচিন্তায় রাষ্ট্রকে অপরিহার্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত করে রাষ্ট্রের বিকাশ ও প্রয়োজনীয়তা, ন্যায়বিচার, প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা প্রভৃতি বিষয় নিয়ে সুচিন্তিত মতামত করেছেন। রাষ্ট্রচিন্তার বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইমাম গাজ্জালির অবদান অপরিসীম।


রাষ্ট্রচিন্তায় ইমাম গাজ্জালির অবদান নিয়ে রাষ্ট্রচিন্তায় ইমাম গাজ্জালির অবদান আলোচনা করা হলো :

১. রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সংজ্ঞা : রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে ইমাম গাজ্জালি বলেন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান এমন একটি বিষয় যার বর্ণনা আল কুরআন, নবি-রাসূল ও তার অনুসারীদের অনুশাসন হতে নিঃসৃত এবং যাতে পার্থিব জগতের রাষ্ট্র সম্পর্কিত বিষয়সমূহ নিয়ন্ত্রিত হয়। তাঁর মতে, রাষ্ট্রব্যবস্থা সবসময় ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী পরিচালিত হবে। 

২. বিজ্ঞানের শ্রেণিবিভাগ ও রাজনীতি বিজ্ঞান : ইমাম গাজ্জালি বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়কে ধর্মের সাথে সম্পর্কযুক্ত ও ধর্ম নিরপেক্ষ এ দুই ভাগে ভাগ করেছেন। তিনি রাজনীতিকে ধর্মের সাথে সম্পর্কযুক্ত বিজ্ঞান হিসেবে অভিহিত করেন। এরিস্টটলের পর গাজ্জালিই মধ্যযুগে প্রথম রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে বিজ্ঞান হিসেবে অভিহিত করেন।

৩. রাষ্ট্রের উৎপত্তি : রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে গাজ্জালির মতবাদ এরিস্টটলের মতবাদের সাথে মিল রয়েছে। আল গাজ্জালি তাঁর এহিয়াউল উলুম' গ্রন্থে রাষ্ট্রের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ সম্পর্কে বর্ণনা দিয়েছেন। তাঁর মতে, মানুষ একাকী বাস করতে পারে না বিধায় তারা প্রকৃতিগতভাবে সর্বদা পরস্পরের নৈকট্য কামনা করে। মানুষ যৌন সম্পর্ক ও সন্তান লাভের আশায় শরিয়তসম্মতভাবে পুরুষ নারীর সান্নিধ্য কামনা করে এবং অন্ন, বস্ত্র ও অপরাপর প্রয়োজনীয় সামগ্রীর জন্য যে অপর লোকের সহযোগিতা কামনা করে। এরূপ সান্নিধ্য ও সহযোগিতার মনস্তত্ত্বের ভিত্তিভূমিতে সমাজ এবং পরবর্তীতে রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়।

৪. রাষ্ট্র ও ধর্ম : ইমাম আল গাজ্জালির মতে, মানবসমাজের ভিত্তি হচ্ছে ধর্ম এবং এর রক্ষাকারী হচ্ছে রাষ্ট্র। তিনি বলেন, রাষ্ট্রে রাজনৈতিক গোলযোগ দেখা দিলে জনগণ ঠিকমতো ধর্মীয় ক্রিয়াকলাপ সম্পন্ন করতে পারে না। তাই ধর্মের সাথে রাষ্ট্রনীতির গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। এজন্য গাজ্জালি ধর্ম থেকে রাষ্ট্রকে পৃথক করাকে বিদায়াত বলেছেন। শাসনকার্যে তিনি রাষ্ট্রীয় দর্শন ও ধর্মতত্ত্বের সমন্বয় সাধন করেন। 

৫. শাসকের প্রয়োজনীয়তা : আল গাজ্জালির মতে, রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য একজন শক্তিশালী শাসক বা সুলতানের প্রয়োজন। রাষ্ট্রের নেতা পরম শৃঙ্খলার সাথে ঐশী নির্দেশনাসমূহ বাস্তবে কার্যকরী করবেন। স্বজনপ্রীতি ত্যাগ করে শাসককে ন্যায়নীতি ও নিরপেক্ষতার সাথে শাসনকার্য চালাতে হবে। তাঁর মতে, ন্যায়বিচারক শাসক আল্লাহর প্রতিনিধি আর অন্যায়কারী শাসক শয়তানের প্রতিনিধি। 

৬. শাসনকর্তা ও গণতন্ত্র : ইমাম গাজ্জালি রাষ্ট্রকে আল্লাহর আদেশ ও নির্দেশাবলি বাস্তবায়নের নিমিত্তে পরিচালিত করার জন্য সুযোগ্য পরিচালকের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। তাঁর মতে, রাষ্ট্রের পরিচালক হিসেবে শাসকের মধ্যে আল্লাহর গুণাবলির প্রতিফল ঘটবে। তাই শাসনকর্তাকে জ্ঞানী ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন, কূটনৈতিক জ্ঞান, বলিষ্ঠ ইচ্ছার অধিকারী, চতুর ও ন্যায়পরায়ণ হতে হবে। গাজ্জালি তাঁর রাষ্ট্রদর্শনে যে ধরনের সরকার কাঠামো প্রবর্তন করেছেন তা আধুনিককালের গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থার অনুরূপ না হলেও এ ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপ্রধানের বিরুদ্ধে একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় বিরুদ্ধাচারণের সুযোগ রয়েছে।

৭. শাসকের সার্বভৌম তত্ত্বের প্রকৃতি : ইমাম আল গাজ্জালি শাসককে আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি শাসকের ক্ষমতা আইন ও ধর্মীয় অনুশাসনের গণ্ডিতে আবদ্ধ করে দিয়েছেন। ন্যায়বান শাসক জ্ঞানী ব্যক্তিদের পরামর্শক্রমে দায়িত্ব পালন করবেন। আল্লাহর প্রতিনিধি হওয়া সত্ত্বেও শাসক নিরঙ্কুশ সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী নন। 

৮. মন্ত্রিপরিষদ : রাষ্ট্রীয় কার্যাবলি সুচারুরূপে সম্পন্ন করার জন্য সৎ ও দক্ষ মন্ত্রিপরিষদ আবশ্যক। আল গাজ্জালির মতে, একটি দক্ষ মন্ত্রিপরিষদই সুলতানের মর্যাদা বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে পারে। কারণ মন্ত্রিপরিষদের মাধ্যমেই সুলতান তাঁর শাসন প্রক্রিয়ার বাস্তব রূপায়ন ঘটান। ৯. রাষ্ট্রীয় আইন : ইমাম গাজ্জালির মতে, সামাজিক জীবন হিসেবে মানুষের সুন্দর জীবন প্রত্যাশা ও রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য আইন থাকা আবশ্যক। তাঁর মতে, রাষ্ট্রে আইনের উপস্থিতি একজনের উপর অপরের অন্যায় হস্তক্ষেপকে বাধা প্রদান করে এবং সকলের গণতান্ত্রিক অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করে। আর সকল আইনকে সকলের উপর প্রয়োগ করতে পারে একমাত্র রাষ্ট্রীয় প্রশাসন। 

১০. প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণ : ইমাম আল গাজ্জালির মতে, বৃহৎ আকৃতির রাষ্ট্রের একটি মাত্র কেন্দ্র থেকে শাসনকার্য পরিচালনা করা সম্ভব না হলে প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণ প্রয়োজন। তিনি বলেন, কেন্দ্রের হাতে সকল গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা ন্যস্ত থাকবে, আর প্রদেশসমূহ সামান্য কিছু সুবিধা ভোগ করবে। তিনি প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থাকে সালতানাতের প্রাণ হিসেবে অভিহিত করেন।

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ইসলাম ও মুসলিম জগতের এক চরম সংকটময় অবস্থায় আল গাজ্জালি ইসলামি রাষ্ট্রচিন্তার ভিত রচনা করেন। তিনি ইসলামকে নবধারায় সঞ্জীবিত করেন। তিনি রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেন। এজন্য সমগ্র মুসলিম জগৎ তাকে 'হুজজাতুল ইসলাম' বা ইসলামের রক্ষক হিসেবে অভিনন্দন জানায়। তার রাষ্ট্রচিন্তার প্রভাব মধ্যযুগের খ্রিস্টচিন্তাবিদদের নাড়া দিয়ে

রাষ্ট্রচিন্তায় ইমাম গাজ্জালির অবদান, রাষ্ট্রচিন্তায় ইমাম গাজ্জালির অবদান রাষ্ট্রচিন্তায় ইমাম গাজ্জালির অবদান, রাষ্ট্রচিন্তায় ইমাম গাজ্জালির অবদান,


নিত্য নতুন সকল আপডেটের জন্য জয়েন করুন

Telegram Group Join Now
Our Facebook Page Join Now
Class 8 Facebook Study Group Join Now
Class 7 Facebook Study Group Join Now
Class 6 Facebook Study Group Join Now

Post a Comment