বাকশাল কী ? বাকশালের সংগঠন বা গঠন পদ্ধতি

প্রশ্ন ॥ বাকশাল কী? বাকশালের সংগঠন বা গঠন পদ্ধতি লিখ । অথবা, বাকশাল বলতে কী বুঝ? বাকশাল গঠন পদ্ধতি লিখ। অথবা, বাকশালের উপর একটি টীকা লিখ।
Follow Our Official Facebook Page For New Updates


Join our Telegram Channel!

প্রশ্ন ॥ বাকশাল কী? বাকশালের সংগঠন বা গঠন পদ্ধতি লিখ । অথবা, বাকশাল বলতে কী বুঝ? বাকশাল গঠন পদ্ধতি লিখ। অথবা, বাকশালের উপর একটি টীকা লিখ। What is Bakshal? Write the organization or structure of Bakshal.

বাকশাল কী ? বাকশালের সংগঠন বা গঠন পদ্ধতি

উত্তর : ভূমিকা : স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে একটি সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ সরকার বাকশাল গঠন করতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু প্রাথমিক অবস্থায় থাকতেই এ উচ্চাভিলাসী পরিকল্পনার পতন ঘটে। রাজনৈতিক দল হিসেবে বাকশাল ছিল অনেকটা কমিউনিস্ট পার্টির মত। তবে বাকশাল গঠনের মাধ্যমেই বাংলাদেশে একদলীয় কায়েম করা হয়েছিল শাসন এবং গণতন্ত্র রুদ্ধ হয়েছে। 

বাকশাল : 

১৯৭৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান 'বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ' (বাকশাল) নামে একটি তৎকালীন রাজনৈতিক দল গঠন করেন। তিনি এ দলের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন এবং বিলুপ্ত আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য ও সকল মন্ত্রী এর সদস্য বলে গণ্য হন। ক্যাপ্টেন (অব.) এ. মনসুর আলী দলের সেক্রেটারি জেনারেল মনোনীত হন। এটি বাংলাদেশের একমাত্র জাতীয় দল হিসেবে ঘোষণা করা হয়। যার ফলে অন্যান্য সকল রাজনৈতিক দলের বিলুপ্তি ঘটে। ১৯৭৫ সালের ৭ জুন রাষ্ট্রপতি জাতীয় দল বাকশালে গঠনতন্ত্র জারি করেন এবং বিভিন্ন কমিটি নিয়োগ করেন। সাংবিধানিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জাতীয় দলের সংগঠন, তার নামকরণ, নিয়ম-শৃঙ্খলা ব্যবস্থা, সদস্যভুক্তি সংগ্রহ ও অন্যান্য বিষয় রাষ্ট্রপতির নির্দেশে সম্পন্ন হবে। সাংবিধানিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অভিনব ব্যবস্থা

সুতরাং বলা যায়, বাকশাল কর্মসূচি জনসচেতনায় বিদ্যমান গণতান্ত্রিক ধারার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না; কিন্তু বঙ্গবন্ধুর কাছে এটা ছিল একটি পরীক্ষামূলক বিষয়। দেশের সংকট নিরসনের জন্য তিনি একটি সাময়িকভাবে প্রয়োগ করেছিলেন মাত্র।


বাকশালের সংগঠন পদ্ধতি : 

গঠনতন্ত্র অনুসারে বাকশাল দলের সাংগঠনিক কাঠামোতে সাতটি স্তর দেখা যায়। নিয়ে এগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো : 

১. কার্যনির্বাহী কমিটি : দলের সর্বোচ্চ নির্বাহী ক্ষমতা কার্যনির্বাহী কমিটির উপর ন্যস্ত থাকবে বলে ঘোষণা করা হয়। কার্যনির্বাহী কমিটির মোট সদস্য সংখ্যা চেয়ারম্যান ও সেক্রেটারিসহ অনূর্ধ্ব ১৫ জন ছিল। কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে চেয়ারম্যান কর্তৃক মনোনীত হতেন। চেয়ারম্যানের সরাসরি তত্ত্বাবধানে কার্যনির্বাহী কমিটি দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দৈনন্দিন কার্যাবলি সম্পাদন বলতে।

২. কেন্দ্রীয় কমিটি : দলীয় কাউন্সিলের দুই অধিবেশনের অন্তর্বর্তীকালে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিই হলো দলের প্রধান সংস্থা। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সংখ্যা হবে অনূর্ধ্ব ১১৫ জন। এর কাজ হলো দলীয় নীতি ও কর্মসূচির প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন করা। এ কমিটি দলীয় চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলের নিকট দায়ী থাকবে।

৩. দলীয় কাউন্সিল : বাকশালের দলীয় কাউন্সিল ছয় পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত হবে। এগুলো হলো 

  • কার্যনির্বাহী কমিটির সকল সদস্য 
  • কেন্দ্রীয় কমিটির সকল সদস্য কার্যনির্বাহী কমিটি কর্তৃক নির্ধারিত কোটা, 
  • জেলা কমিটিসমূহের প্রতিনিধিবৃন্দ, 
  • অঙ্গ সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিবৃন্দ, 
  • শিল্প কারখানা, কৃষি প্রতিষ্ঠান, সমবায় প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি নিয়ে গঠিত প্রাথমিক কমিটিসমূহের প্রতিনিধিবৃন্দ এবং 
  • চেয়ারম্যান কর্তৃক মনোনীত অনূর্ধ্ব পঞ্চাশ জন দলীয় পূর্ণ সদস্য। 

৪. জেলা কমিটি : জেলা কমিটি গঠিত হবে একজন সম্পাদক প্রয়োজনবোধে অনূর্ধ্ব পাঁচজন যুগ্ম-সম্পাদক ও কার্যনির্বাহী কমিটি কর্তৃক নির্ধারিত সংখ্যক সদস্যকে নিয়ে। জেলা কমিটি তার কাজকর্মের জন্য জেলা কাউন্সিলের নিকট দায়ী থাকবে।

৫. জেলা কাউন্সিল : জেলা কাউন্সিল জেলায় দলের সর্বোচ্চ সংস্থা। দলীয় সদস্য সংখ্যার অনুপাতে জেলা কাউন্সিলের সদস্য সংখ্যা কার্যনির্বাহী কমিটি কর্তৃক নির্ধারিত হবে। জেলা কমিটি প্রতি পাঁচ বছর অন্তর জেলা কাউন্সিল অধিবেশনের ব্যবস্থা করবে। ৬. থানা বা আঞ্চলিক কমিটি : একজন সম্পাদক, প্রয়োজনবোধে তিনজন যুগ্ম-সম্পাদক ও কার্যনির্বাহী কর্তৃক নির্ধারিত সংখ্যক সদস্য নিয়ে থানা কমিটি গঠিত হবে। আঞ্চলিক কমিটি জেলা কাউন্সিলের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। 

৭. ইউনিয়ন বা প্রাথমিক কমিটি : বাংলাদেশের প্রত্যেক ইউনিয়নে হলো স্থানীয় পর্যায়ে দলের প্রাথমিক কমিটি গঠিত হবে। দলের অন্যান্য পাঁচজন সদস্য নিয়ে প্রাথমিক কমিটি গঠিত হবে। প্রাথমিক কমিটির কর্তব্য একটি করে ঊর্ধ্বতন কমিটির নির্দেশ কার্যকরী করা। 

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাকশালের গঠন পদ্ধতি অত্যন্ত সুসংহত ও সুগঠিত ছিল। মূলত বাকশালের ভিত্তি সূসংহত করার জন্যই বঙ্গবন্ধু বাকশালের এমন সংগঠন কাঠামোর রূপরেখা দিয়েছেন। কিন্তু নানা কারণে বাকশাল সুসংঘবদ্ধভাবে প্রতিনিধি হতে পারেনি। পরিকল্পনার পর্যায়ে বা প্রাথমিক পর্যায়েই বাকশালের পতন ঘটে। কাজেই এ ব্যবস্থার মূল্যায়ন করাটাও কষ্টকর।


নিত্য নতুন সকল আপডেটের জন্য জয়েন করুন

Telegram Group Join Now
Our Facebook Page Join Now
Class 8 Facebook Study Group Join Now
Class 7 Facebook Study Group Join Now
Class 6 Facebook Study Group Join Now

Post a Comment