বাংলার অর্থনীতির উপর ব্রিটিশ শাসনের ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব

বাংলার অর্থনীতির উপর ব্রিটিশ শাসনের ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব - বাংলার অর্থনীতির উপর ব্রিটিশ শাসনের ইতিবাচক প্রভাব
Follow Our Official Facebook Page For New Updates


Join our Telegram Channel!

আসসালামু আলাইকুম, আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় বাংলার অর্থনীতির উপর ব্রিটিশ শাসনের ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

বাংলার অর্থনীতির উপর ব্রিটিশ শাসনের ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব

বাংলার অর্থনীতির উপর ব্রিটিশ শাসনের ইতিবাচক প্রভাব 

মোগল সাম্রাজ্যের পর প্রতিষ্ঠিত হয় ব্রিটিশ সাম্রাজ্য। ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হবার পর বাংলার অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়। ব্রিটিশদের প্রভাবে বাংলার কৃষি উৎপাদন বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। 

ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে উন্নতি হয়। ব্রিটিশ ব্যবসায়ীরা এদেশে ব্যবসাক্ষেত্রে বিনিয়োগ করেন। যার ফলে এ দেশের অর্থনীতির খ্যাত সমৃদ্ধ হয়। বাংলার শস্য ও সম্পদ বাইরে রপ্তানি করা হয়। সর্বক্ষেত্রে ব্রিটিশদের প্রভাবে পরিবর্তিত হয়।

বাংলার অর্থনীতির উপর ব্রিটিশ শাসনের ইতিবাচক প্রভাব : উপমহাদেশে সর্বপ্রথম বাংলাতেই ব্রিটিশ শাসনের সূত্রপাত ঘটে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতবর্ষে ব্যবসার উদ্দেশ্যে আগমন করেছিলেন। 

কালক্রমে তারা ভারতবর্ষ শাসন করে। ব্রিটিশদের আগমনে বাংলার অর্থনীতির ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হয়। নিম্নে বাংলার অর্থনীতির উপর ব্রিটিশ শাসনের ইতিবাচক প্রভাবসমূহ উল্লেখ করা হলো :

১. মুদ্রা অর্থনীতি প্রচলন : 

বাংলার অর্থনীতিতে মুদ্রা অর্থনীতি প্রচলনে ব্রিটিশদের ভূমিকা অপরিসীম। বাংলায় ব্রিটিশদের আগমনের পূর্বে বাংলার অর্থনীতি ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রাম। 

পারস্পরিক দ্রব্য লেনদেনের মাধ্যমে তাদের সমস্যা সমাধান করতেন। তখন বাংলার বিনিময় প্রথা ছিল। এদেশের ব্রিটিশরা বিনিময় সমস্যা সমাধানের জন্য মুদ্রার প্রচলন করেন। যার ফলে দ্রব্য লেনদেন সহজ হয়।

২. অর্থকরী ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি : 

ব্রিটিশরা এদেশের অর্থকরী ফসলের উৎপাদনে সহায়তা করেন। বাংলাতে পাট, চা, তুলা, নীল, তামাক ইত্যাদি উৎপাদনে ব্রিটিশদের অবদান অপরিসীম। পাট উৎপাদন করে বাংলা খ্যাতি লাভ করে। পাটকে সোনালি আঁশ বলা হতো। অর্থকরী ফসল উৎপাদনে ব্রিটিশ শিল্পপতিরা বিনিয়োগ করতো।

৩. শিল্প কারখানার বিকাশ : 

ব্রিটিশরা এদেশের আগমন করে বৃহৎ শিল্প কারখানা স্থাপন করে। ব্রিটিশরা কুটির শিল্পের পাশাপাশি বস্ত্র শিল্প, খনিজ শিল্প, বনজশিল্প ইত্যাদির প্রচলন করে। 

শিল্প কারখানার উৎপাদন বৃদ্ধির পলে বাংলার অর্থনীতি সমৃদ্ধ হয়। বাংলায় বৃহৎ শিল্পের বিকাশে ব্রিটিশদের অবদান অনেক।

৪. ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়ন : 

ব্রিটিশদের আগমনের পূর্বে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এদেশে একচেটিয়া ব্যবসা-বাণিজ্য করত। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিলুপ্তির পর ব্রিটিশরা এদেশে অবাধ বাণিজ্য নীতি চালু করে। ফলে বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ীরা এদেশে অবাধে বাণিজ্যের সুযোগ পায়। ফলে বাংলার অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে ওঠে।

৫. নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি : 

বাংলায় ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠা হবার পর এদেশে নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। বাংলার বেকারত্ব সমস্যা কিছুটা দূর হয়। বেকারদের কর্মসংস্থানের ফলে বাংলার অর্থনীতি বিকশিত হয়। ৬. আমদানি ও রপ্তানি প্রসার : বাংলার আমদানির ও রপ্তানি ক্ষেত্র প্রসারিত হয়। 

বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হয়। ভোগ্যপণ্য রপ্তানির ফলে বাংলার অর্থনীতি শক্তিশালী হয়। এছাড়া বিভিন্ন দ্রব্য কম দামে বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। আমদানি ও রপ্তানি বৃদ্ধির ফলে বাংলার অর্থনীতি সমৃদ্ধিশালী হয়ে উঠেছিল।

৭. যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন : 

বাংলায় ব্রিটিশদের আগমনে বাংলার অর্থনীতি ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হয়। বাংলার রাস্তাঘাট, নদীপথ, রেলপথ, সংস্কার ও নতুন করে তৈরি করেন ব্রিটিশ শাসকেরা। 

এছাড়া বাংলায় পোস্ট অফিস স্থাপনের ফলে সারা দেশ এমনকি বিদেশে যোগাযোগ সহজ হয়। বাংলায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ব্রিটিশ শাসনামলের ভূমিকা অপরিসীম।


বাংলার অর্থনৈতিক অবস্থার উপর ব্রিটিশ শাসনের নেতিবাচক প্রভাব :

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শোষণ, নির্যাতন, কুশাসন, লুণ্ঠন ইত্যাদির ফলে ভারতবর্ষে সাধারণ জনগণের অর্থনৈতিক জীবন ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। জোরপূর্বক নীলচাষে বাধ্য করা ও খাজনা আদায়ে অমানুষিক জবরদস্তিমূলক আচরণ কৃষককুলকে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে পঙ্গু করে ফেলে। 

বাংলার গ্রাম অর্থনীতির উপর ব্রিটিশ প্রভাব ছিল মারাত্মক। ইংরেজদের কার্যকলাপের ফলশ্রুতিতে স্থানীয় শিল্প ও কলকারখানার ধ্বংস অনিবার্য হয়ে উঠে। বাংলার অর্থনীতি ব্রিটিশদের প্রভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছিল।

বাংলার নেতিবাচক প্রভাব : বাংলায় ব্রিটিশরা দুইশত বছর শাসন করেন। তাদের শাসনের ফলে বাংলার অর্থনৈতিক অবস্থার উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। নিম্নে বাংলার অর্থনৈতিক অবস্থার উপর ব্রিটিশ শাসনের নেতিবাচক প্রভাব উল্লেখ করা হলো :

১. কুটিরশিল্প ধ্বংস : 

১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের পর বাংলার কুটিরশিল্প ধ্বংস হয়। বিশেষত বাংলার বস্ত্রশিল্পে বিপর্যয় দেখা দেয়। এর কারণ ছিল ইংল্যান্ড বাংলা থেকে আমদানি সুতিবস্ত্রের উপর অত্যধিক হারে শুল্ক আদায়ের ফলে বাংলা থেকে কাপড় রপ্তানি হ্রাস পায়। এছাড়া বৃহৎ শিল্পের প্রভাবে কুটিরশিল্প প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হয়। 

২. ভূমি রাজস্বনীতি :

১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের পর বাংলায় প্রচণ্ড ভূমি রাজস্বের চাপ বাড়ে। মুর্শিদকুলির আমল থেকে যে ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল তা ভেঙে পড়ে। ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানি দেওয়ানি গ্রহণের পর ভূমি রাজস্বের ক্ষেত্রে প্রচণ্ড শোষণ আরম্ভ হয়। 

ইজারা বন্দোবস্ত, আমলদারি প্রথা ইত্যাদির ফলে কৃষকের উপর নির্মম শোষণ চলে। এর ফলে ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় ছিয়াত্তরের মন্বন্তর ঘটে।

৩. অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙে পড়ে : 

ব্রিটিশ শাসনামলে বাংলার অর্থনীতি ভেঙে পড়ে। বাংলার কৃষকদের দিয়ে জোর করে নীলচাষ করানো হতো। বাংলার অর্থ ইংল্যান্ডে পাচার করা হয়। ফলে বাংলার অর্থনৈতিক কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ে। বাংলার ব্যবসা বাণিজ্যে দুর্নীতি ব্যাপক হারে বাড়ে।

৪. কৃষি ধ্বংস : 

ব্রিটিশরা বাংলার কৃষকদের দিয়ে অর্থকরী ফসল উৎপাদনে উৎসাহী করেন। অর্থকরী ফসলের লভ্যাংশ বেশিরভাগ পায় ব্রিটিশ ব্যবসায়ী। ভোগপণ্য উৎপাদনের হার কমে যায়। যার ফলে বাঙালিরা খাদ্যের চরম সংকটের সম্মুখীন হয়ে পড়ে।

৫. ভূমিহীন কৃষের সংখ্যা বৃদ্ধি : 

ব্রিটিশদের শোষণের ফলে বাংলার কৃষকেরা ভূমিহীন কৃষকে পরিণত হয়। ভূমিহীন কৃষকেরা অন্যের জমিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। কৃষকের উপর অত্যাচার বৃদ্ধি পায়। সূর্যাস্ত আইন, নীলকরদের অত্যাচারে বাংলার কৃষকের অবস্থা খারাপ ছিল । 

৬. উপনিবেশে পরিণত : 

অষ্টাদশ শতকের দ্বিতীয় ভাগে বাংলার অর্থনীতি উপনিবেশিক অর্থনীতিতে পরিণত হয়। ইংল্যান্ডের স্বার্থেই বাংলার অর্থনীতি, কৃষি সব কিছুকেই ব্যবহার করা হয়। বাংলার রাজস্ব কোম্পানি তার বাণিজ্যকেও সামাজিক স্বার্থে ব্যবহার করে। বাংলার বাণিজ্য ইউরোপীয় বণিকদের হাতে চলে যায় 

৭. ইউরোপীয় বণিকদের প্রভাব : 

বাংলার বাণিজ্য ইউরোপীয় বণিকদের একচেটিয়া অধিকারে চলে যায়। ইউরোপীয় বণিকরা তাদের গোমস্তা, বেনিয়ান ইত্যাদির সাহায্যে একচেটিয়া বাণিজ্য বাড়াতে থাকে। 

লবণ, আফিম, সোরা ইত্যাদি দ্রব্যের একচেটিয়া বাণিজ্য ইউরোপীয়দের হাতে চলে যায়। ইউরোপীয়দের সহযোগী হিসেবে কোন কোন দেশীয় বণিক টিকে থাকে ।

পরিশেষে বলা যায় যে, দেশীয় হস্তশিল্প ও দেশীয় কলকারখানার উৎপাদিত পণ্যের স্থলে যন্ত্রচালিত শিল্পসামগ্রী ও পণ্য বাংলার বাজার পুরোপুরি দখল করেছিল। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার মাল খরিদের জন্য বাংলার রাজস্বকে মাল কেনার মূলধন হিসেবে ব্যবহার করে। 

অষ্টাদশ শতকের দ্বিতীয় ভাগে বাংলার অর্থনীতি উপনিবেশিক অর্থনীতিতে পরিণত হয়। বাংলার বাণিজ্য ইউরোপীয় বণিকদের একচেটিয়া অধিকারে চলে আসে। যার ফলে বাংলার অর্থনীতি হুমকির সম্মুখীন হয়।

নিত্য নতুন সকল আপডেটের জন্য জয়েন করুন

Telegram Group Join Now
Our Facebook Page Join Now
Class 8 Facebook Study Group Join Now
Class 7 Facebook Study Group Join Now
Class 6 Facebook Study Group Join Now

Post a Comment