জমি রেজিস্ট্রি করতে কি কি লাগে - ২০২৩ সালে জমি রেজিস্ট্রি খরচসহ বিস্তারিত জানুন (PDF)

জমি রেজিস্ট্রি করতে কি কি লাগে, dolil registry kagojpotro, jomir registry te ki ki lage, জমি রেজিস্ট্রি করার খরচ ২০২৩, জমি রেজিস্ট্রি করার নিয়ম
Follow Our Official Facebook Page For New Updates


Join our Telegram Channel!

জমি রেজিস্ট্রি করতে কি কি লাগে?

জমি রেজিস্ট্রি করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সকল বিষয়াবলী:

জমির দলিল রেজিস্ট্রি একটি জটিল ও হয়রানি বিষয়। তবে সঠিক নিয়ম জেনে কাজটি করলে কোনো ঝামেলা পোহাতে হয়না। কিছুদিন আগে জমি রেজিস্ট্রি করতে গিয়েও আমি নিজেও নানা রকম সমস্যায় ভোগেছি। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সব না থাকার কারণে নির্ধারিত দিন জমি রেজিস্ট্রি করতে পারিনি। তাই আজকে আমি আপনাদের জমি রেজিস্ট্রি কিভাবে করবেন, জমি রেজিস্ট্রি করতে কি কি কাগজপত্র লাগে, এবং জমি রেজিস্ট্রি করতে কত টাকা ফি আসতে পারে ইত্যাদি সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।

জমি রেজিস্ট্রি করতে যে সকল কাগজপত্র প্রয়োজন হয়:

নিবন্ধন আইন, ১৯০৮ এর ধারা ৫২ক, ধারা ২২ক(১), ধারা ২২ক(২), ধারা ২২ক(৩) অনুযায়ী দলিল রেজিস্ট্রেশনের জন্য নিম্নলিখিত কাগজ-পত্রাদি আবশ্যিকভাবে প্রয়োজনঃ

  • সংশ্লিষ্ট জমির খতিয়ান: খতিয়ান হল জমির মালিকানা সম্পর্কিত একটি সরকারি নথি। এটি জেলা প্রশাসকের রেকর্ড রুম থেকে সংগ্রহ করা যেতে পারে।
  • খাজনা রশিদ: খাজনা হল জমির উপর সরকারের এক ধরনের কর। হাল সন পর্যন্ত খাজনা পরিশোধের রশিদ জমির মালিকানা প্রমাণের জন্য প্রয়োজন।
  • ক্রেতা এবং বিক্রেতার পরিচয়পত্র: ক্রেতা এবং বিক্রেতার পরিচয়পত্র হিসেবে জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম নিবন্ধন সনদ বা পাসপোর্টের কপি জমা দিতে হবে।
  • উত্তরাধিকার/ওয়ারিশ সনদ: উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে উত্তরাধিকার/ওয়ারিশ সনদ প্রয়োজন। এই ওয়ারিশ সনদ বর্তমানে অবশ্যই অনলাইনকৃত হতে হবে। হাতে লেখা পুরনো ওয়ারিশ সনদ প্রযোজ্য নহে।
  • ক্রেতা এবং বিক্রেতার ছবি: ক্রেতা এবং বিক্রেতার সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি জমা দিতে হবে।
  • প্রয়োজনীয় বায়া দলিল: যদি জমিটি আগে বিক্রি হয়েছিল, তাহলে সেই দলিলের মূল কপি বা সার্টিফাইড কপি জমা দিতে হবে।
  • E-TIN: সিটি কর্পোরেশন, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এবং জেলা সদরের পৌরসভার অধীন ১ লক্ষ টাকার বেশি মূল্যের সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে দলিলের ক্রেতা এবং বিক্রেতার E-TIN প্রয়োজন।

কাগজপত্র সংগ্রহের স্থান:

  • খতিয়ান: জেলা প্রশাসকের রেকর্ড রুম (www.land.gov.bd)
  • খাজনা রশিদ: ইউনিয়ন ভূমি অফিস (তহশিল অফিস)
  • পরিচয়পত্র: গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক সরবরাহকৃত
  • উত্তরাধিকার/ওয়ারিশ সনদ: স্থানীয় পৌরসভা/ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়
  • ছবি: যেকোনো ফটোগ্রাফি স্টুডিও
  • বায়া দলিল: সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয় বা জেলা রেজিস্ট্রারের কার্যালয় (সদর রেজিস্ট্রেশন রেকর্ডরুম)
  • E-TIN: জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (www.nbr.gov.bd)

কাগজপত্র জমা দেওয়ার স্থান:

জমি হস্তান্তরের দলিল: সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়

জমি হস্তান্তরের প্রক্রিয়া:

  • ক্রেতা এবং বিক্রেতা উপরে উল্লেখিত সকল কাগজপত্র সংগ্রহ করবেন।
  • ক্রেতা এবং বিক্রেতা জমি হস্তান্তরের দলিলটি সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে জমা দেবেন।
  • সাব-রেজিস্ট্রার দলিলটি যাচাই-বাছাই করে তা গ্রহণ করবেন।
  • দলিল গ্রহণের পর সাব-রেজিস্ট্রার দলিল রেজিস্ট্রি করবেন।
  • রেজিস্ট্রিকৃত দলিলটি ক্রেতা এবং বিক্রেতার কাছে হস্তান্তর করা হবে।

জমি রেজিস্ট্রির সময় করণীয়:

  • জমি রেজিস্ট্রির সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলি খেয়াল রাখতে হবে:
  • দলিলে জমির সঠিক বিবরণ, ক্রেতা এবং বিক্রেতার সঠিক নাম, পিতা-মাতার নাম, ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, দলিলের মূল্য, রেজিস্ট্রি ফি, ইত্যাদি উল্লেখ থাকতে হবে।
  • দলিলে ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়েরই স্বাক্ষর থাকতে হবে।
  • দলিলে সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের সীলমোহর থাকতে হবে।
  • প্রথমে জমির বিক্রেতার কাছ থেকে বিক্রয় দলিল সংগ্রহ করতে হবে।
  • দলিলটি একজন দলিল লেখকের কাছে নিয়ে যাওয়ার পর দলিলটিতে ভুলত্রুটি না থাকলে তাতে স্বাক্ষর করতে হবে।
  • দলিলে স্বাক্ষর করার পর দলিলটি সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে জমা দিতে হবে।
  • সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে দলিল জমা দেওয়ার পর দলিলটির মূল্য নির্ধারণ করা হবে।
  • দলিলের মূল্য পরিশোধের পর দলিলটি রেজিস্ট্রি করা হবে।
  • জমি রেজিস্ট্রির ফি

বিশেষ দ্রষ্টব্য:

  • জমি রেজিস্ট্রির জন্য জমির বিক্রেতার নামজারি থাকতে হবে।
  • জমির ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়েরই বয়স ১৮ বছরের বেশি হতে হবে।
  • জমির ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়েরই জমির উপর কোনো ঋণ বা অন্য কোনো দায় থাকলে তা পরিশোধ করতে হবে।
  • জমি হস্তান্তরের দলিল রেজিস্ট্রি করার জন্য জমিটির বর্তমান মূল্য নির্ধারণ করতে হবে।
  • জমিটির বর্তমান মূল্য নির্ধারণের জন্য একজন তালুকদার বা সাব-রেজিস্ট্রারকে নিয়োগ করা যেতে পারে।
  • জমি হস্তান্তরের দলিল রেজিস্ট্রি করার জন্য নির্দিষ্ট ফি প্রদান করতে হবে।

জমি রেজিস্ট্রি খরচ ২০২৩

জমি ক্রয়ের পর রেজিস্ট্রি করা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। জমি রেজিস্ট্রি না করলে জমির মালিকানা হস্তান্তরের বৈধতা থাকে না। জমি রেজিস্ট্রির ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের ফি দিতে হয়। এই ফি এলাকাভেদে ভিন্ন হতে পারে।

জমি রেজিস্ট্রি ফির ধরন:

জমি রেজিস্ট্রি ফির প্রধানত চারটি ধরন রয়েছে। যথা:
  1. রেজিস্ট্রি ফি
  2. স্টাম্প শুল্ক
  3. স্থানীয় সরকার কর
  4. উৎস কর

রেজিস্ট্রি ফি

রেজিস্ট্রি ফি হলো জমির দলিলে লিখিত মোট মূল্যের ১%। এই ফি নগদ বা পে-অর্ডারের মাধ্যমে জমা দিতে হয়।

স্টাম্প শুল্ক

স্টাম্প শুল্ক হলো জমির দলিলে লিখিত মোট মূল্যের ১.৫%। এই ফির জন্য সর্বোচ্চ ১২০০ টাকার নন-জুডিসিয়াল স্টাম্প ব্যবহার করা যাবে। বাকি অর্থ পে-অর্ডারের মাধ্যমে জমা দিতে হয়।

স্থানীয় সরকার কর

স্থানীয় সরকার কর হলো জমির দলিলে লিখিত মোট মূল্যের ৩%। এই ফি স্থানীয় সোনালী ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের হিসাব নম্বরে পে-অর্ডারের মাধ্যমে জমা দিতে হয়।

উৎস কর

উৎস কর হলো জমির দলিলে লিখিত মোট মূল্যের ১% (ইউনিয়ন এলাকার জন্য) বা ২% (পৌরসভা এলাকার জন্য)। এই ফি নগদে জমা দিতে হয়।

অন্যান্য ফি

  • হলফনামা ফি: ৩০০ টাকার নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে হলফনামা
  • ই-ফি: ১০০ টাকা
  • এন.ফি: প্রতি পৃষ্ঠায় বাংলা ৩০০ শব্দ বা তাহার অংশ বিশেষ ১৬ টাকা, প্রতি পৃষ্ঠায় ইংরেজি ৩০০ শব্দ বা তাহার অংশ বিশেষ ২৪ টাকা
  • এন.এন. ফি: প্রতি পৃষ্ঠায় বাংলা ৩০০ শব্দ বা তাহার অংশ বিশেষ এর জন্য ২৪ টাকা, প্রতি পৃষ্ঠায় ইংরেজি ৩০০ শব্দ বা তাহার অংশ বিশেষ ৩৬ টাকা
  • নোটিশ ফি: সম্পত্তি হস্তান্তরের নোটিশ আবেদন পত্রের জন্য কোর্ট ফি ১০ টাকা

উদাহরণ
ধরুন, কোন মৌজার ২০ শতাংশ জমির বিক্রিত দলিল মূল্য ৫,০০,০০০ টাকা। তাহলে জমি রেজিস্ট্রির মোট খরচ হবে:
  • রেজিস্ট্রি ফি: ৫,০০,০০০ টাকার ১% = ৫,০০০ টাকা
  • স্টাম্প শুল্ক: ৫,০০,০০০ টাকার ১.৫% = ৭,৫০০ টাকা
  • স্থানীয় সরকার কর: ৫,০০,০০০ টাকার ৩% = ১৫,০০০ টাকা
  • উৎস কর: ৫,০০,০০০ টাকার ১% (ইউনিয়ন এলাকার জন্য) = ৫,০০০ টাকা
  • মোট খরচ: ৫,০০০ + ৭,৫০০ + ১৫,০০০ + ৫,০০০ = ৩২,৫০০ টাকা

নিচে একটি চার্ট দেয়া হলো:

জমি রেজিস্ট্রি করতে কি কি লাগে - ২০২৩ সালে জমি রেজিস্ট্রি খরচসহ বিস্তারিত জানুন


উল্লেখ্য যে,
জমি রেজিস্ট্রির খরচ এলাকাভেদে ভিন্ন হতে পারে। তাই জমি রেজিস্ট্রি করার আগে অবশ্যই স্থানীয় রেজিস্ট্রি অফিসে খোঁজখবর নিয়ে নিবেন।

কত দিন অতিবাহিত হলে দলিল আর পাওয়া যাবে না?

দলিলের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া শেষ হলে রেজিস্ট্রির জন্য দলিল দাখিলের সময় প্রদানকৃত ‘৫২ ধারার রশিদ’ জমা দিয়ে দাখিলকারী বা তার মনোনীত ব্যক্তি মূল দলিল গ্রহন করতে পারেন। দলিল ফেরত গ্রহনের নোটিশ প্রদানের তারিখ হতে এক মাসের মধ্যে মুল দলিল ফেরত না নিলে পরবর্তী প্রতি মাস বা তার অংশ বিশেষের জন্য ৫ টাকা হারে জরিমানা আদায় করা হয়। 
তবে বিলম্ব যত মাসই হোক না কেন, জরিমানা ১০০ টাকা এর বেশী আদায়ের বিধান নাই। রেজিস্ট্রি শেষ হওয়ার পর কোন দলিল দাবীবিহীন অবস্থায় ২ (দুই) বছরের বেশি রেজিস্ট্রি অফিসে পরে থাকলে “রেজিস্ট্রেশন আইন, ১৯০৮” এর ৮৫ ধারার বিধান মতে, রেজিস্ট্রেশন অধিদপ্তরের পূর্ব অনুমোদনক্রমে সেগুলো ধ্বংস করে ফেলা যায়। সুতরাং সময়মত মূল দলিল সংগ্রহ করে সংরক্ষণ প্রয়োজন।

জমি রেজিস্ট্রির সুবিধা

জমি রেজিস্ট্রি করার অনেক সুবিধা রয়েছে। জমি রেজিস্ট্রি করলে জমির মালিকানা নিয়ে কোনো ঝামেলা হয় না। জমি বিক্রি, দান, বা উত্তরাধিকার সূত্রে হস্তান্তর করার জন্য জমির রেজিস্ট্রি দলিল প্রয়োজন হয়।

জমি রেজিস্ট্রি কেন গুরুত্বপূর্ণ?

জমি রেজিস্ট্রি করা আপনার মালিকানা আইনগতভাবে স্বীকৃতি দেয় এবং আপনাকে সম্ভাব্য আইনি বিরোধ থেকে রক্ষা করে। এটি আপনাকে আপনার জমি বিক্রি, ভাড়া বা উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত করতে সহায়তা করে।


উপরে উল্লেখি নিয়ম গুলোর পিডিএফ পেতে চাইলে নিচের Download বাটনে ক্লিক করে ফাইলটি ডাউনলোড করুন

জমি রেজিস্ট্রি করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সকল বিষয়াবলী

নিত্য নতুন সকল আপডেটের জন্য জয়েন করুন

Telegram Group Join Now
Our Facebook Page Join Now
Class 8 Facebook Study Group Join Now
Class 7 Facebook Study Group Join Now
Class 6 Facebook Study Group Join Now

Post a Comment