প্রাচ্যের রাষ্ট্রচিন্তা এর পাঠের গুরুত্ব, প্রধান বৈশিষ্ট্য, পরিধি ও বিষয়বস্তু | অনার্স ২য় বর্ষ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান

প্রাচ্যের রাষ্ট্রচিন্তা: এর গুরুত্ব বৈশিষ্ট্য পরিধি এবং বিষয়বস্তু, প্রাচ্যের রাষ্ট্রচিন্তা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইসলামি রাষ্ট্রচিন্তা, চীনা দর্শন,
Join our Telegram Channel!

প্রাচ্যের রাষ্ট্রচিন্তা: এর গুরুত্ব, বৈশিষ্ট্য, পরিধি এবং বিষয়বস্তু

প্রাচ্যের রাষ্ট্রচিন্তা এর পাঠের গুরুত্ব, প্রধান বৈশিষ্ট্য, পরিধি ও বিষয়বস্তু | অনার্স ২য় বর্ষ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান


প্রাচ্যের রাষ্ট্রচিন্তা

অ-পাশ্চাত্য দেশসমূহ তথা এশিয়া, আফ্রিকার ও দঃ আমেরিকার দেশসমূহ প্রাচ্য দেশ বা অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত। আর প্রাচ্যের যে সকল মনীষী রাষ্ট্র ও রাজনীতি সম্পর্কে যে চিন্তা-ভাবনা করেছেন তাকে প্রাচ্যের রাষ্ট্রচিন্তা বলে। প্রাচ্যের সমাজ, রাজনীতি, রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে চিন্তাবিদ বা মনীষীদের চিন্তা-চেতনাই প্রাচ্যের রাষ্ট্রচিন্তা। প্রাচ্যের রাষ্ট্রচিন্তাকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

  1. প্রাচ্য প্রাচীন রাষ্ট্রচিন্তা: প্রাচীনকালে চীনে কনফুসিয়াস, লাওৎসু, মেনসিয়াস, ভারতে কৌটিল্য ও ব্যাবিলনে হাম্বুরাবি প্রাচ্য রাষ্ট্রচিন্তার জগৎকে প্রসারিত করেন।
  2. প্রাচ্য মধ্যযুগীয় রাষ্ট্রচিন্তা: মধ্যযুগে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রবর্তিত রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রাচ্য রাষ্ট্রচিন্তার জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে আল ফারাবী, ইবনে সিনা, আল গাজ্জালি, ইবনে রুশদ প্রাচ্য রাষ্ট্রচিন্তায় যথেষ্ট অবদান রাখেন।
  3. প্রাচ্য আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তা: প্রাচ্যের আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তায় অবদান রাখেন সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী, মহাত্মা গান্ধী, আল্লামা ইকবাল, মোজাফফর আহমদ, মওলানা ভাসানি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রমুখ।

রাষ্ট্রচিন্তা পাঠের গুরুত্ব

আধুনিক বিশ্বের পাশ্চাত্য রাষ্ট্রচিন্তার প্রভাব ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি প্রাচ্যের রাষ্ট্রচিন্তার তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক গুরুত্ব বেড়েছে সমান্তরালভাবে। মধ্যযুগের গৌরবময় সময়ে প্রাচ্যের রাষ্ট্রচিন্তা বেশ খ্যাতি অর্জন করে। মূলত চৈনিক, ভারতীয় ও ইসলামি রাষ্ট্রচিন্তার সমন্বয়ে গঠিত রাজনৈতিক চিন্তাধারা ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে।

রাষ্ট্রচিন্তা পাঠের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা

নিম্নে প্রাচ্যের রাষ্ট্রচিন্তা পাঠের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করা হলো:

  • ইসলামি জ্ঞান লাভ: ইসলামের পরিচয়, উৎপত্তি, ক্রমবিকাশ, ইসলামের গতিশীলতা, মর্যাদা, অধিকার, দায়িত্ব, কর্তব্য ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা উচিত। প্রাচ্যের রাষ্ট্রচিন্তা অধ্যয়নের মাধ্যমে এ জ্ঞান লাভ করা যায়।
  • ইসলামি অর্থব্যবস্থা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ: ইসলামি অর্থব্যবস্থা হলো সুদমুক্ত ও ভারসাম্যপূর্ণ অর্থব্যবস্থা। মানবকল্যাণের লক্ষ্যে এ অর্থব্যবস্থা কাজ করে।
  • ইসলামি রাজনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ: ইসলামি রাজনীতি, রাষ্ট্রের উপাদান, গঠন প্রণালি, বৈশিষ্ট্য ও মূলনীতি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে প্রাচ্যের রাষ্ট্রচিন্তা অধ্যয়ন করা প্রয়োজন।
  • ইসলামি আইন সম্পর্কে জ্ঞান লাভ: প্রাচ্যের রাষ্ট্রচিন্তা ইসলামি আইন সম্পর্কে আলোচনা করে। আইনের উৎস, বৈশিষ্ট্য, আইন প্রণয়নের পদ্ধতি ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে এটি জরুরি।
  • ইসলাম দর্শন সম্পর্কে জ্ঞান লাভ: ইসলামের আদর্শ, তাওহীদ, সাম্য, মৈত্রী, ভ্রাতৃত্ব ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে প্রাচ্যের রাষ্ট্রচিন্তা অধ্যয়ন করা জরুরি।
  • তুলনামূলক জ্ঞান লাভ: উন্নত বিশ্বের সাথে তুলনায় উন্নয়নশীল দেশগুলো উপকৃত হতে পারে।
  • মুসলিম মনীষীদের অবদান সম্পর্কে জানা: মুসলিম মনীষীদের অবদান ও সভ্যতার উৎকর্ষতা সম্পর্কে জানতে প্রাচ্যের রাষ্ট্রচিন্তা অধ্যয়ন জরুরি।
  • চৈনিক জীবনাচার ও মূল্যবোধ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ: চীনের দর্শন ও সভ্যতা সম্পর্কে জানার জন্য এটি প্রয়োজনীয়।
  • ভারতীয় জীবনাচার ও মূল্যবোধ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ: ভারতীয় চিন্তাবিদদের মতামত ও বর্তমান শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে এটি জরুরি।
  • আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ: বিশ্ব শান্তি ও ইসলামের প্রচার-প্রসারের লক্ষ্যে রাষ্ট্রচিন্তা অধ্যয়ন প্রয়োজন।

প্রাচ্যের রাষ্ট্রচিন্তার প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ

প্রাচ্যের রাষ্ট্রচিন্তার ক্ষেত্রে ধর্ম ও নৈতিকতার সামঞ্জস্য থাকলেও প্রকৃতপক্ষে ততটা ধর্মকেন্দ্রিক নয়। কেননা কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে ধর্ম ও রাষ্ট্রনীতিকে এক করে দেখা হয়নি। তাছাড়া মধ্যযুগে প্রাচ্যের মুসলিম চিন্তাবিদগণ প্লেটো ও এরিস্টটলের ধারণার সাথে মুসলিম দর্শনের সমন্বয় সাধন করেছেন। এক্ষেত্রে প্রাচ্য রাষ্ট্রচিন্তার বেশকিছু বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান।

প্রাচ্যের রাষ্ট্রচিন্তার প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ

  • ১. আদর্শবাদ: প্রাচ্যের চীনে কনফুসিয়াসের আদর্শকে কেন্দ্র করে আদর্শবাদ তত্ত্বের উদ্ভব ঘটে। মধ্যযুগে ইসলামি ভাবধারার আদলে আদর্শবাদী ভাবধারা গড়ে উঠে।
  • ২. নীতিবাদ: প্রাচ্যের রাষ্ট্রচিন্তা যতটা না রাজনৈতিক, তার চেয়ে নৈতিক প্রকৃতির। প্রাচীন ভারতের ভানুসংহিতা, কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র, কনফুসিয়াস, লাওৎসের ভাবধারা এবং ইসলামের সকল কাজে নৈতিকতার উপদেশ বাণী পাওয়া যায়।
  • ৩. অভিজ্ঞতাবাদ: প্রাচ্যের রাষ্ট্রচিন্তার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অভিজ্ঞতাবাদ। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার নিদর্শন পাওয়া যায়।
  • ৪. ন্যায়বিচার: প্রাচ্যের রাষ্ট্রচিন্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো ন্যায়বিচার। কনফুসিয়াস এবং ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থায় ন্যায়বিচারের উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
  • ৫. ধর্মের প্রাধান্য: কনফুসিয়াসের রাজনৈতিক চিন্তাধারা, তাওবাদ, ইসলামি রাষ্ট্রচিন্তা ইত্যাদিতে ধর্মের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।
  • ৬. মানবতাবাদ: প্রাচ্যের দার্শনিকদের মধ্যে মানবতাবাদের নিদর্শন পাওয়া যায়। ব্যক্তির অধিকারকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
  • ৭. সুশাসন: প্রাচ্যের রাষ্ট্রচিন্তায় সুশাসনের গুরুত্ব উল্লেখযোগ্য। কনফুসিয়াস এবং হযরত উমর (রা.)-এর সুশাসন এর উদাহরণ।
  • ৮. রক্ষণশীলতা: প্রাচ্যের রাষ্ট্রচিন্তা রক্ষণশীলতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ।
  • ৯. আন্তর্জাতিকতা: প্রাচ্যের রাষ্ট্রচিন্তা আন্তর্জাতিকতার ধারণাকে সমর্থন করে।

প্রাচ্যের রাষ্ট্রচিন্তার বিষয়বস্তু ও পরিধি

প্রাচ্যের রাষ্ট্রচিন্তার বিষয়বস্তু খুবই ব্যাপক ও বিস্তৃত। আত্মপরিচিতি ও আত্মশক্তি থেকে শুরু করে পরলৌকিক মুক্তি তথা ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয় প্রাচ্যের রাষ্ট্রচিন্তার অন্তর্ভুক্ত।

  • ১. ইসলামি জীবনব্যবস্থা: ইসলামি জীবনব্যবস্থা সম্পর্কে ব্যাপক আলোচনা করা হয়েছে।
  • ২. ইসলামি আইন: ইসলামি আইনের সংজ্ঞা, উৎস, বৈশিষ্ট্য এবং প্রণয়ন পদ্ধতি প্রাচ্যের রাষ্ট্রচিন্তার অন্তর্ভুক্ত।
  • ৩. ইসলামি অর্থব্যবস্থা: সুন্দর সমাজ গঠনে ইসলামি অর্থব্যবস্থার গুরুত্ব।
  • ৪. ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা: সামাজিক ন্যায়বিচার প্রাচ্য রাষ্ট্রচিন্তার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
  • ৫. ইসলামি রাষ্ট্রচিন্তার মৌলিক ধারণা: আল্লাহর একত্ববাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, খেলাফত ইত্যাদি।
  • ৬. রাজনৈতিক ব্যবস্থা: ইসলামি রাষ্ট্রের গঠন, উপাদান, মূলনীতি ইত্যাদি প্রাচ্যের রাষ্ট্রচিন্তার অংশ।
  • ৭. সামাজিক অবস্থা: সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং অপরাধ দমনের ওপর জোর।
  • ৮. আদর্শবাদ: কনফুসিয়াস ও কৌটিল্যের আদর্শ প্রাচ্য রাষ্ট্রচিন্তার অংশ।
  • ৯. যুদ্ধ, শাস্তি ও নিরাপত্তা: প্রাচ্যের রাষ্ট্রচিন্তায় যুদ্ধের বিরুদ্ধে নেতিবাচক মনোভাব এবং শান্তি ও নিরাপত্তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

নতুন নতুন সকল আপডেটের জন্য জয়েন করুন

Post a Comment